ধান থেকে চাল

avatar

ধান থেকে চাল বানানো অনেক ধৈর্যের, কষ্টের এবং সময়ের অপেক্ষার কাজ। অর্থাৎ আমরা যে চাল দিয়ে ভাত রান্না করে খাই,সেই চাল।

কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত অনেক ভাত অপচয় করতেছি ‌। যেটা করা উচিত নয়।

ধান থেকে চাল বানানোর উপায় টা অনেকেই জানে, কিন্তু অনেকেই জানে না। এই পোস্টটির মাধ্যমে আমি যতটুকু পারি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আজকের পোস্টটি আমি বাংলায় লিখতেছি , কারণ এটা বাংলা ছাড়া বোঝানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের ৫০% মানুষের পেশা কৃষিকাজ। আমাদের দেশের অধিকাংশ জায়গা কৃষিজমি, শুধু মাত্র ঢাকা শহর বাদে।

কিন্তু আমাদের কৃষকদের মূল্য নেই, কিন্তু চালের দাম বাড়তেই আছে। তাহলে শুরু করছি।

FB_IMG_1639376079024.jpg

এটা হলো ধানের ছবি,যখন এটা জমিতে থাকে। জমিতে এই পর্যন্ত উৎপাদন করতে অনেক ধাপ রয়েছে, সেসব নাহয় অন্য একদিন বলা যাবে। আজকের টপিকস ধান থেকে চাল।

FB_IMG_1639375514414.jpg

আমরা জমিতে মৌসুমে ধানের বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করে সেটা বপণ করে থাকি । যাই হোক এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে কৃষকরা জমির ধান কাটার পর সেসব বাধঁতেছে । ধান কাটার পর সেই ধান জমিতে ৭-৮ দিন ফেলে রাখতে হয় , যাতে খড় এবং ধান একটু শুকায় । শুকানোর পড় এগুলো নিজ নিজ বাসায় নিয়ে যেতে হয়,কামলার খরচ দিয়ে,কামলা মানে কৃষক।

FB_IMG_1639375517142.jpg
এরপর সেসব ধান বাসায় এনে মাড়াই করা হয় । অনেকে এগুলো মেশিনের মাধ্যমে করে থাকে । বাসায় আনার সময় তারা কাঁধে করে নিয়ে আসে এসব ধানের আটি । এগুলা অনেক কষ্টের কাজ, প্রথমে বাসায় আনা, তারপর মাড়াই করা। এগুলো আমাদের এখানে বর্তমানে সের অনুযায়ী টাকা দেয়া হয়। ১ সের মানে ৫ শতাংশ জমি।

FB_IMG_1639375519858.jpg

ধান থেকে চাল বানানোকে আমরা " ধান উসানি " বলে থাকি । এজন্য সেই ধান ১২-১৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয় । পুকুরে ফেলে রেখেও ভেজানো যায় । আমার উদ্দেশ্য যেহেতু ধান থেকে চাল তাই আমি এটাই দেখাচ্ছি। আমরা প্রতিবছর ২ বার করে এই কাজ গুলো করে থাকি।

FB_IMG_1639375521996.jpg

তারপর ধান উসানি শুরু । এই ছবিটিতে ২ টি বড় হাঁড়ি দেখা যাচ্ছে , এসব হাঁড়িতে , প্রতিটায় প্রায় ১ মণ ধান ধরে । এসবের একটিতে আগুন দিয়ে ভাপ আনতে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট লাগে । এগুলার জন্য হাঁড়ি যোগাড় করাও একটা ব্যাপার। আবার খড় পোড়ানোতেও ক্ষতি, কিন্তু কি করার অন্য কোনো উপায় তো নেই।

FB_IMG_1639375524094.jpg

এরপর সেসব ধান আবারো ঠান্ডা করতে হয় ৩-৪ ঘন্টা । এগুলা আমরা রাতে উসাইয়ি রেখে দেই, পড়ে সকালে নেড়ে দেই।

FB_IMG_1639375526098.jpg

এরপর রোদে দিতে হয় । ২ দিন কড়া রোদে সেসব ধান শুকোতে হয় । কম সময় কিংবা বেশি সময় রোদে শুকালে চাল ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
শীতকালে সূর্যের দেখা পাওয়া কষ্টকর,তাই অনেক সময় ৩-৪ দিন ও‌ লাগে, প্রতিদিন এগুলা আবার গুছিয়ে রাখতে হয়, চোরের ভয়ে। শুকানো হলে একেবারে বস্তায় ভরাইয়া রাখি।

FB_IMG_1639375528283.jpg

এরপর সেসব আবারো বস্তায় করে নিয়ে যেতে হয় ধান ভাঙা মেশিনের ওখানে । অনেকে বাসায় মেশিন এলে ধান ভেঙে নেয় । কিন্তু বাসায় আনা মেশিনে চাল ভালো মতো হয় না, ভেঙ্গে যায় আরো নানান সমস্যা।

FB_IMG_1639375532169.jpg

এই সময় অনেক কষ্ট হয় , কেননা ধানের বস্তা অপেক্ষা চালের বস্তার ওজন বেশি । আমাদের এখানে ১ মণ ধান থেকে চাল বানাতে ৩০ টাকা করে নেয় ।

FB_IMG_1639375534454.jpg

কি ভাবছেন চাল পেয়ে গেলাম? এই তো পেয়ে গেছি। না এখনো কাজ বাকি আছে।

FB_IMG_1639375537513.jpg

চাল পেয়েছি ঠিকই , কিন্তু এসব খাওয়ার যোগ্য নয় । কারণ এতে তুষ রয়েছে । এসব আবারো ঝাড়তে হয় কুলা দিয়ে । আমাদের ছোট পরিবার, কারণ সব চাচাদের আলাদা সংসার,তাই আমাদের ৬ মাসের জন্য যতটুকু চাল দরকার আমরা ততটুকু ই ঝাড়ি।

FB_IMG_1639375539884.jpg

" আলহামদুলিল্লাহ " অবশেষে আমরা খাওয়ার যোগ্য চাল হাতে পাই । দেখুন আল্লাহর অশেষ রহমতে চাল পেয়েছি এবং চালও ভাঙে নি । অনেকের চাল ভেঙে যায় , অধিক সময় রোদে শুকানোর ফলে । সব কিছুই আল্লাহর রহমত।


আমার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। কুড়িগ্রাম বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের একটি জেলা। এখানে কৃষি জমি ই ৯০%। এবং ৭০% লোক কৃষিজীবী।
আমাদের এখানে এভাবেই চাল থেকে ধান বানানো হয়। অন্য জেলায় কিছুটা ব্যতিক্রম থাকতে পারে। আমি এসব ছবি আমার বন্ধুদের জানানোর জন্য ফেসবুকে ও‌ পোস্ট করেছি।

আশা করি সবাই আমার ব্লগটি পড়বেন। সকলের জানা উচিত আমাদের দেশের কৃষিকাজ সম্পর্কে।

ধন্যবাদ সবাইকে।
"আসসালামু আলাইকুম"



0
0
0.000
5 comments
avatar

জীবনে অনেক বার করেছি এই কাজ আমি ... :-) :-)

0
0
0.000
avatar

আপনি তো ঢাকায় থাকেন,ঢাকায় তো এসবের সুযোগ হয় না। আমরা প্রতিবছর ২ বার/১ বার এই কাজ করে থাকি,আমার সময়-সুযোগ না থাকায় প্রতিবার থাকা হয় না

0
0
0.000
avatar

Good post guys, food crops and some very diligent workers who still work manually

0
0
0.000
avatar

Hello, my friend @minhaz007

Although I don't understand your language, I know that this is a rice field.

I loved your publication. The photograph tells a very clear story.

Best regards

0
0
0.000