মুন্নার সাথে আড্ডা
অনেক দিন পর গ্রামে এসেছি তিনদিন হলো, এসেই পরেছি জ্বরের কবলে। তিনদিনে শরীর এর হাড় হাড্ডি আর কমরের অসহ্য ব্যথা থেকে আজ একটু ভাল বোধ করছি। ভালো বোধ করায় বিকেলে এহকটু হাটতে বেড়িয়েছি।
গ্রামের আকা বাকা আর মাটির পথ, হাটতে হাটতে অনেকদুর চলে এলাম। আসলে অনেকদিন পর তো বুঝতেই পারি নিই এতোদূর চলে আসবো। এমন সময় মেঘ গুড় গুড় করায় ভাবলাম আর বেশিদূর যাওয়া হল না, এবার উল্টো পথে ফেরা যাক। দু'এক ফোটা বৃষ্টিও মুখের মধ্যে স্পর্শে করছে। তবে হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মুখের মধ্যে লাগলে ভালোই লাগে। মাঝে মধ্যে তো আমি আকাশ পানে চেয়ে বৃষ্টির ছোট ছোট তুষারের নেয় ফোটা গুলো উপভোগ করি। যাক বৃষ্টি শুরু হয়েছে আর সন্ধ্যাও ঘনিয়ে এসেছে, আশেপাশে কোন জায়গাও নেই বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার। এমনিতেই তো জ্বর থেকে মাত্র উঠলাম। আর কিছুদূর গেলে শুধু মুন্নার পানের দোকান টাই আছে, সেটা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। কিন্তু আসার সময় সেটা বন্ধ দেখেছিলাম তারপরেও একটু কষ্ট করে দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। এখন দেখছি বাতি জ্বলছে। অত চিন্তা করার সময় নেই দ্রুত সেদিকেই পা বাড়ালাম।
মুন্নার দোকানে ঢুকতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। দেখলাম চোখ মুখ অন্ধার করে মুন্না দোকানে হেলান দিয়ে উদাস নয়নে বসে আছে। আজ পাঁচ বছর হলো মুন্নার বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট রোগ, অনেক টাকা ডাক্তার দেখিয়েছে। ঢাকায় চিকিৎসাও করিয়েছে অনেক টাকাপয়সা খরচ হয়েছে তার।
আমাকে দেখেই সে নড়ে চড়ে বসলো ..
-ভাইজান কি অবস্থা, কেমন আছেন? অনেকদিন পর গ্রামে, কবে আসছেন? অনেকদিন হল পান খাওয়াই নাই, পান খান এক খিলি, ভাল মিস্টি জর্দা আছে, দিব?
-না রে শরীরটা ভালো না আজ খাব না, তোর শরীর স্বাস্থের কি অবস্থা কেমন আছিস?
-আমার আর থাকা ভাই, আমার শ্বাসকষ্ট টা আরও বেড়েছে। চিকিৎসার তো আর কমতি রাখলাম না। সবেই তো করালাম কিছু হয় না, সামান্য কিছু জমি ছিল তাও শ্যাষ। বাকি দিন কিভাবে চলব আল্লাহই জানেন।
-চিন্তা করিস না এবার ঢাকা গেলে আমাকে ফোন দিস। তোর জন্য থাকা খাওয়া ব্যবস্থা আমি করবো নে। তোর ফোন আছে?
-না ভাই🙁
-এটা কোন কথা বললি? এযুগে সবার হাতে হাতে মোবাইল আর তোর নাই? এক কাজ করিস আমার কাছে একটু মোবাইল আছে । আমি সেটা ব্যবহার করি না। তুই নিয়ে যাইস বাসায় যাওয়ার পথে। আচ্ছা কাগজ কলম দে আমার নাম্বার লিখে দেই।
নাম্বার নেয়ার কোন আগ্রহ তার মধ্যে দেখা গেল না, দেখলাম সে শুন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে মেঘ পরিষ্কার বৃষ্টিও থেমে গেছে আমি মুন্নার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে হাটা ধরলাম, কাদা পানির রাস্থা তাতে আবার অন্ধকার। ফোনটাও ঘরে রেখে বার হয়েছিলাম। পেছনে ফিরে দেখি মুন্না দোকান বন্ধ করছে..
বাসায় ঢুকতেই আম্মা গামছা নিয়ে এসেই কই গেছিলি বলেই আমার উপর উস্মা প্রকাশ করলেন কারন সবেমাত্র জ্বর থেকে উঠেছি এরমধ্যে আবার বৃষ্টিতে ভিজা
-আমি তো হাঁটতে বার হয়েছিলাম। বাসায় আর ভালো লাগছিল না। কে জানতো যে বৃষ্টি হবে? মা তুমি চিন্তা করোনা, প্যারাসিটামল খেয়ে নিব। ভাগ্যিস মুন্নার দোকানটা খোলা পেয়েছিলাম নাহলে আজ কাজ সারা হয়ে যেত বৃষ্টিতে ভিজে। ছেলেটাকে দেখে খুব খারাপ লাগে আম্মা, চিকিৎসার পিছনে অনেক টাকাপয়সা খরচ করেও কোন লাভ হনয় নিইা হয় অথচ দেখো এরমধ্যে সে আমাকে জোর করেই মিস্টি পান খাওয়ালো, গ্রামের মানুষগুলো আসলেই খুব সহজ সরল অতিথি পরায়ন।
ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে, বিদ্যুৎ এখানে যায় না মাঝে মধ্যে আসে। আম্মা হারিকেন জ্বালিয়ে টেবিলে রাখতে রাখতে আমার দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে....
-তুই সত্যি করে বল তো কোথায় গিয়েছিলি?
-ধুর মা, এখানে মিথ্যা বলার কি আছে। আমি কি এখনো ছোট আছি মা?
-এবার আম্মা খুব কাছে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে বললেন - কই জ্বরও তো নাই
-আজব তো এরসাথে জ্বরের কি সম্পর্ক?
-মা রাগে দাঁত খিচিয়ে বলে -যেই ছেলেটা ৩ মাস আগেই মারা গেলো শ্বাসকষ্ট নিয়ে তার সাথে তুই আড্ডা মেরে আসলি, সাথে আবার মিষ্টি জর্দা দিয়ে পান? ফাজলামির একটা সীমা আছে। মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে কেউ ফাজলামি করে?
- আম্মার কথা শুনে আমার মাথাটা লাটিমের মত ঘুরতে লাগলো, আমার অবস্থা দেখে আম্মা আমাকে ধরে ফেললেন এবং আমার জ্ঞান হারানোর আগে মনে আছে আমি আম্মার হাত ধরে বলেছিলাম - আম্মা বিশ্বাস কর আমি যা বলেছি তার এক বর্নও মিথ্যা নয়...
পরদিন সকালে আর অপেক্ষা না করেই চাচাতো ভাইয়ের সাথে মুন্নার কবর দেখে আসলাম, পথিমধ্যে তার দোকানের সামনে দাড়ালাম। বিস্তর পার্থক্য! গতকাল সন্ধ্যায় যেমন দেখেছিলাম তেমন মোটেও নয় একেবারেই জীর্ন শীর্ন হয়ে পরে আছে। অথচ কাল সন্ধ্যায় সব পরিপাটি ছিল।
Hi @steemitwork, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Congratulations @steemitwork! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @hivebuzz: