ইস্যুর উপর ইস্যু
গতকাল বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ডের রায় হয়। রায় নিয়ে শেষের দিকে আমি আমার মন্তব্য দিচ্ছি। প্রথমে মিন্নিকে নিয়ে কিছু কথা।
মিন্নি নামের মেয়েটিকে জানে না এমন খুব কম সংখ্যক লোকেই আছে আমাদের দেশে। মিন্নি ছিলো একজন প্রথম শ্রেনীর আঞ্চলিক কলগার্ল, প্রথম বড় বড় খদ্দরদের চাহিদা মেটাতে সে। তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল এই মিন্নি। তাকে নিয়ে ফেসবুকে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে এখনো হচ্ছে। কেউ কেউ আবেগের দোকান খুলে বসেছিলেন কেউ আবার বিবেকের। কেউ আবার তাকে সাহসী নারী আবার কেউ আদর্শ প্রেমিকা বা বউয়ের আসনে বসিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে লেখার কোন আগ্রহ বা রুচি কোনটাই আমার নেই।
তার ফাঁসি রায় কার্যকর হওয়াতে (যদি শেষ পর্যন্ত হয়) এলাকাবাসী একজন দামী কলগার্লকে হারাবে এটাই, তাছাড়া আর কিছুই না। মাঝ খান থেকে কয়েকজন মানুষ অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু দেখলো দেশবাসী। কিছু পরিবার অসহায় হয়ে পরলো, ধ্বংস হলো। বরগুনায় মিন্নির শতশত কাষ্টমার যারা ছিল - তারা অন্য মিন্নি খুঁজে নেবে এখন। আমাদের দেশে এমন মিন্নির সংখ্যা কম নয়।
প্রতিনিয়তই হাজার হাজার মানুষ, হাজার হাজার পরিবার ধ্বংস করে দিচ্ছে মিন্নিরা । আর আমাদের তা দেখেও চোখ বুজে সহ্য করে হচ্ছে দিনের পর দিন।
রিফাত তো মারা গিয়ে বেঁচে গেছে- কিন্তু এইসব মিন্নিদের জন্য যেসব রিফাত এখনও ধুকে ধুকে বেঁচে রয়েছে প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহুর্তে মরছে তাদের দুঃখ তো সমাজকে কোনদিনও স্পর্শ করবে না যতখন না এমন কোন ঘটনা ঘটে।
এখন আসি আদালতের রায় নিয়ে। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান বুধবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি মিন্নি সহ ছয় আসামির সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন তিনি। আমার অবশ্য এই ৫০ হাজার টাকার কথা শুনে হাসি পেয়েছে। আচ্ছা বলুন তো মরবেই যখন তাহলে কোন দুঃখে টাকা টা দিবে?
যদিও বা এইসব বললে আদালত অবমাননার দায়ে জেলেও যেতে হতে পারে। তরপরেও বলে যাই। আদালত এখন ভাইরাল ইস্যুতে রায় দিচ্ছে। মিন্নির অপরাধ আছে তবে সেটি ফাঁসি হবার মত না। এই বিষয়টি আমি বেশ কয়েকজন আইনজীবীর কাছে শুনলাম। এই রায় উচ্চ আদালতে টিকবে না এটা কমবেশি তারা অনুমান করতে পেরেছে।
ন্যায় বিচারে আবেগ বা পাবলিকরে খুশি করার কোন অপশন নেই। আমার কাছে মনে হয় মিন্নির ফাঁসির রায় জাস্ট একটা ইস্যু তৈরী, একটা শয়তানি, ইতরামি। 🙄 পুর্বের এবং পরের ইস্যুর কভারিং....🤔
ভাইরাল ইস্যুকে ভাইরাল ইস্যু দ্বারা ধামাচাপা দেওয়ার এক অনন্য কৌশল রপ্ত করেছে এই সরকার।
আজ আবার আরেকটা ধর্ষণ ইস্যু বাজার গরম করেছে। যেই ছাত্রলীগের ছেলেটা দুই দিন আগেও বলেছিল
ধর্ষণকারীদের ক্রসফায়ার দিলে সমস্যা কোথায় মাননীয় আইজিপি মহদয়। সেই ছেলেই আজকে আবার ধর্ষণ করেছে। (ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগরের উত্তরের সহ সভাপতি)
তাই যতদিন ইস্যু দিয়ে ইস্যু চাপা দেওয়া হবে ততদিন ইস্যুর পরিমান (ইস্যু)² হয়ে যাবে। আমার কাছে এর থেকে একমাত্র পরিত্রানের উপায় হচ্ছে সুষ্ঠ ও সচ্ছ বিচার ব্যবস্থা। ছল চতুরামীর আশ্রয় নিলে এর ফল কখনোই ভালো হয় না।
যাই হোক নিচের মিন্নি আর তার বাবার ছবিটি দেখে আমার খারাপ লাগছে। আসলে তার যে ফাঁসি রায় দিয়েছে তার জন্য নয়। রায় দিয়েছে আদালত আমার বা আপনার পছন্দ হয়েছে বা অপছন্দ হয়েছে সেটা ভিন্ন কথা।
এই ছবিটিতে আমার খারাপ লেগেছে একজন বাবার জন্য। একজন বাবা তার মেয়েকে নিয়ে যাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। আদরের মেয়েকে বিয়ে দিবে এক সমুদ্র কান্না বুকে বেধে বরের হাতে তুলে দিবেন। কিন্তু পৃথিবীর সম্ভবত ইনিই প্রথম বাবা যিনি তার মেয়েকে আদালতে নিয়ে এসে ফাঁসির রায় শুনে জেলে রেখে গেলেন।
এত এত ইস্যু আমাদের সামনে দিয়ে দেদারছে চলে যাচ্ছে, আমরা ট্র্যাক রাখতে পারছি না। চাঞ্চল্যকর এই হত্যার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনার এই পোস্ট দেখে মনে পড়ল।
যাই হোক, সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের জাস্টিস সিস্টেমের উপর একজন নাক কান খোলা মানুষের কোনই ভরসা থাকতে পারে না। এখানে আপনি কখনই ন্যায়বিচার পাবেন না।
আসলেই, আমাদের দেশে ন্যায় বিচারের কোন বালাই নাই। সবই চলছে হুকুম মাফিক। এখন রক্ষকেই ভক্ষক।
Congratulations @steemitwork! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @hivebuzz:
Hi @steemitwork, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Congratulations @steemitwork!
You raised your level and are now a Minnow!