জীবনের প্রথম ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা
আসসালামু আলাইকুম
গত ২৬ শে ডিসেম্বর ২০২১, আমার কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমার আমার জাতীয় পরিচয় পত্র হয়েছে কিছুদিন পূর্বে,জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি হওয়ার পর এটাই হল আমার জীবনের প্রথম ভোট দেয়া।বাংলাদেশের প্রতি পাঁচ বছর পরপর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হয়। এতে করে জনগণ ৫ বছরের জন্য, তাদের চেয়ারম্যান,মেম্বার এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করে।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । এখানে জনগণ
প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে।
২৬ শে ডিসেম্বর ছিল চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। আমার গ্রামের বাড়ি রাজারহাট উপজেলায়, সেখানে চতুর্থ ধাপে ভোট হয়েছিল। এজন্য আমি অনেক উত্তেজিত ছিলাম। কারণ এর আগে আমি কখনও এই অভিজ্ঞতা পাইনি। নির্বাচনের পূর্বেই সবরকম দোয়া নেয়া,খাওয়া-দাওয়া, প্রচারণা সব সমাপ্ত হয়েছে।
নির্বাচনে আমার নিজের চাচা মেম্বার পদপ্রার্থী ছিলেন। তিনি গত ১০ বছর ধরে দুই মেয়াদে মেম্বার। তার মার্কা ছিল ফুটবল। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মেম্বার নির্বাচন করব ই। এবার আসলো নির্বাচনের দিন।
এদিন ছিল খুবই উৎসবমুখর পরিবেশ।আমি কখনও কল্পনা করিনি বাংলাদেশ এত ভালো সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন বলতে মোট ২০০০ জনের মধ্যে ১৭০০ জন মানুষ ভোট দিয়েছিল।
উপরের ছবিটি দেখতে পারতেছেন পোস্টার চারিদিকে ছিল, মানুষের কোলাহল ছিল ভিড় ছিল।
অন্যরা খুবই অপেক্ষা করতে ছিল,তারা চাচ্ছিল একেবারে শেষ সময়ে অর্থাৎ ৩.৪৫ এ ভোট দিবে।কিন্তু আমি অনেক উত্তেজিত থাকায় খুব তাড়াতাড়ি ভোট দিয়েছিলাম অর্থাৎ সকাল ৯.৩০ এ।
ভোট দেয়ার জন্য সবার প্রথমে সিরিয়াল নাম্বার নিতে হয়।কারণ ভোট দেয়ার সময় আপনার সিরিয়াল দেখা হবে আপনার আইডি কার্ড দেখবে না। আমি গত রাতেই আমার সিরিয়াল দেখেছিলাম তবুও ভোট দিতে যাবার আগে আরেকবার দেখে নিলাম। এই ছবিটি দেখতে পারছেন কিছু মানুষ কাগজ নিয়ে বসে আছে ,আর অন্যের সিরিয়াল খুঁজে কাগজে লিখে দিচ্ছে, যাতে করে ভুলে না যায়।
এবার ভোটের লাইনে দাঁড়ালাম।আমি শুনেছিলাম সকালে একটু বেশি মানুষ হয় ভোট দেয়ার জন্য।কিন্তু আমি দেখেছিলাম যে শুধু সকাল নয় সারাটা দিনই এরকম মানুষ ছিল এবং খুবই ব্যস্ত সময় কেটে ছিল সেদিন।
পুরুষ এবং মহিলাদের আলাদা লাইন ছিল। তাদের ভোট দেয়ার রুম আলাদা ,তাদের এজেন্ট আলাদা ,তাদের সবকিছুই আলাদা।
এদিন রোদ ছিল যার ফলে শীতের মধ্যে রোদের মধ্যে সকলেই খুবই সুন্দরভাবে আনন্দের সাথে ভোট দিতে এসেছিল এবং ভোট দিয়েছিলো।
এরপর আমি ভোটের কক্ষে ঢুকলাম। ঢুকেই ভিতরে দেখলাম সেখানে আমার এক ভাই এবং এক চাচা রয়েছে এজেন্ট হিসেবে। যার ফলে আমি মনে কিছুটা সাহস পেলাম। এবার আমার সিরিয়াল নাম্বার বলার সাথে সাথে তারা আমার নাম এবং চেহারা দেখে নিশ্চিত করল। এরপর আসল পোলিং এজেন্টরা আমার আঙ্গুলের ছাপ নিল, আমার আঙ্গুলের মধ্যে মার্কার দিয়ে কালো কালার দাগ দিল। যাতে করে আমি আর ভোট না দিতে পারি। এই কালিটা ছিল অন্যান্য মারকার থেকে পুরো আলাদা। কারণ এই দাগ উঠতে ছিল না। যাইহোক আমার ভোট জালিয়াতির কোনো ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা নেই।
এরপর তারা আমাকে তিনটি কাগজ দিল ,একটি চেয়ারম্যান এর ,একটি মেম্বারের এবং একটি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। এরপর সেই কাগজ নিয়ে আমি পাশে একটি কালো পর্দার আড়ালে জায়গায় গেলাম। সেখানে গিয়ে আমি আমার পছন্দের তিনটি মার্কায় এবং প্রার্থীকে ভোট দিলাম।
এরপর বাইরে চলে এলাম। হয়ে গেল আমার জীবনের প্রথম ভোট দেয়া।
এখন আমার ভোট সম্পন্ন।
এরপর আমি পুরোটা সময়ই ভোটকেন্দ্রের পাশে ছিলাম।সেখানে আমি অন্যান্য মানুষদেরকে তাদের সিরিয়াল নাম্বার খুঁজতে সহায়তা করে ছিলাম।এমনকি আমার মোবাইলে পিডিএফ ফাইল ছিল যার ফলে খুব সহজেই তাদের সিরিয়াল নাম্বার বের করে দিচ্ছিলাম। খুবই ব্যস্ত সময় কেটে ছিল আমার।সেখানে অনেক পরিচিত অপরিচিত মানুষ ছিল অন্যান্য গ্রাম থেকে যারা এসেছে। তবে আমার কোন ভয় নেই কারণ ওটাই আমার গ্রাম দোকানে আমাকেও দিয়েছো মানুষই জানে। এমনকি আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম এই কেন্দ্রে কোন রকমের বিশৃঙ্খলা হবে না।
এভাবেই সময় যেতে লাগলো।যেতে যেতে বিকেল চারটার সময় ভোট বন্ধ করে দেয়া হলো। ভোট দেয়ার সময় হলো সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত। এরপর ভোট গণনা শুরু। ।
এরপর অপেক্ষার পালা শুরু। গ্রামের সকল মানুষ সেদিন তাদের কাজ কর্ম বাদ দিয়ে শুধু ফলাফলের অপেক্ষা করতেছিলো। তারা স্কুলের মাঠে বসে ছিলো।
ফলাফল অপেক্ষা করতে করতে ধীরে ধীরে এজেন্টরা বেরিয়ে আসলো। তারা কাগজের মধ্যে ফলাফল লিখে নিয়ে এসেছিল। উপরের ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন কিছুটা। তারা ফলাফল এবং ভোটের সংখ্যা লিখে এনেছিল।
ফলাফল দিতে দিতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।এখন দিন ছোট তাই ৫.৩০ এই রাত হয়ে যায়। ফলাফল দিতে দিতে সাতটা বেজে গিয়েছিলো।তারা ইচ্ছে করে দেরি করে রেখে ফলাফল দেয় যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়।
এই ছবিটি দেখতে পারছেন মাঝের লোকটি হলো আমার চাচা যিনি মেম্বার জয়লাভ করেছেন।
মূলত সবাই খুবই আনন্দিত ছিল । বিভিন্ন মিছিল হচ্ছিল। আমিও মিছিলের মধ্যে ছিলাম। এসব বলে বোঝানো সম্ভব নয়। সবদিক মিলিয়ে খুবই ভালো ছিল।
দুর্ভাগ্যবশত আমার দিনটি ভোটের মধ্যে শুধুমাত্র একজন জয়লাভ করেছিল বাকি দুইজন হেরে গিয়েছিল।কিন্তু সমস্যা নেই কারণ আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আমার চাচা মেম্বার। যেটা সফল হয়েছিল।উনি ১১০৫ ভোট পেয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় জন পেয়েছিলেন ৬২৫ টি ভোট। অর্থাৎ অনেক বেশি ভোট বেশি পেয়ে ছিল। এই নিয়ে চাচা তৃতীয়বারের মতো মেম্বার।
আমাদের রাজারহাটে সাতটি ইউনিয়ন রয়েছে। শেষ হবে চেয়ারম্যান নিম্নে দেখতে পারেন। রাজারহাটে বেসরকারি ভাবে ৭ইউনিয়নের নির্বাচনী ফলাফলঃ
(১) রাজারহাট সদরে এনামুল হক (নৌকা)
(২) চাকিরপশা ইউনিয়নে আব্দুস ছালাম (নৌকা)
(৩) নাজিমখান ইউনিয়নে আব্দুল মালেক পাটোয়ারী নয়া (নৌকা)
(৪) ছিনাই ইউনিয়নে সাদেকুল হক নুরু (নৌকা)
(৫) ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ইউনিয়নে আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক (স্বতন্ত্র)
(৬) উমর মজিদ ইউনিয়নে আদিল (স্বতন্ত্র)
(৭) বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাইজুল ইসলাম ও বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর হোসেনের ভোট সমান।
আমরা হলাম উমর মজিদ ইউনিয়ন
এসবই ছিল আমার জীবনের প্রথম ভোটের অভিজ্ঞতা। আশা করি আপনারা আমার পোস্টটি পড়বেন। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে আমাকে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি এখন পর্যন্ত দুইবার দিয়েছি। নেক্সট প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষায় রইলাম।
বুঝতে পেরেছি সংসদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ
এই দুইটায়, আমার আইডি কার্ড বানানো হয় নাই তখন সমস্যার কারণে,তাই মিস করছি
না মিসটেক ২ বার কিভাবে?
উপজেলা এন্ড পৌরসভা নির্বাচন।
যদিও একটা নিজের অন্যটা আমার ভাইয়ের, ওনার টাও নিজে দিয়ে শিখতেছিলাম কিভাবে দিতে হয়। 😅