প্রানবন্ত থাকার ০৫ উপায়..

avatar

images (21).jpeg

বর্তমান সময়ে মানুষ যত প্রযুক্তি এবং উৎকর্ষতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তত মানবজাতির জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমরা যত আধুনিক হচ্ছি- ততই যেন অন্তঃসারশূন্য হচ্ছি।

আমাদের ভেতর থেকে মানবিক বোধ গুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন জীবনের রস যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রাণহীন, রসহীন, রোবটিক একটা জীবনের দিকে আমরা যেন এগিয়ে যাচ্ছি! এই উন্নতির কি কোন মানে আছে?

জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি? আমরা কি শুধু টাকা কামাবো? বাড়ি করব? গাড়ি করব? জমি কিনব? সম্পদ বাড়াবো? নাম, খ্যাতি..? জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি এগুলো??

images (18).jpeg


পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী যে মানুষটা, তার লক্ষ্য কি হবে? তার চেয়ে ধনী তো আর কেউ নেই! সে কি আরো টাকা কামাতে চাইবে? যে মানুষটা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর, তার জীবনের উদ্দেশ্য কি হবে? সেই ক্ষমতা কিভাবে আরো বৃদ্ধি করা যায়, সেটা? যে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকাদের একজন, এরপরে কি চাইবেন তিনি? নিজের জনপ্রিয়তা কিভাবে আরো বৃদ্ধি করা যায়, সেটা?....না।

আমরা যদি বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় মানুষদের দিকে তাকাই, দেখতে পাবো- তাদের জীবনে শুধু হাহাকার, শুন্যতা আর একাকীত্ব। এজন্য অনেক বিখ্যাত তারকাকে আমরা দেখি সুইসাইড করতে।

মানুষের ভেতর যখন শূন্যতা ছাড়া আর কিছু থাকে না। তখন সে আত্মহননের দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে আমরা সবাই মিলে জেনে শুনে সেই শূন্যতার দিকে কেন ছুটছি?
images (16).jpeg

হ্যা, আমিও স্বীকার করি- মানুষের জীবনে কিছুটা খ্যাতির, কিছুটা সম্পদের, কিছুটা জনপ্রিয়তার এবং কিছুটা ক্ষমতার দরকার আছে। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও যে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় মানুষের জীবনে খুব বেশি দরকার, আমরা সেটা ভুলে যাই!


মানুষের জীবনে দরকার প্রশান্তির। নিজেকে উজ্জীবিত রাখা। আর যদি কেউ সেটা পারে, তাহলে সে প্রশান্তি খুঁজে পায় গাছতলায়, কঠোর পরিশ্রমে, মাটিকাটায়, প্রখর রোদের নিচে রিকশা চালানোয়।

নিজেকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টাটা আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম চেষ্টা। কারণ আমরা যে কাজই করি না কেন, যদি নিজেকে উজ্জীবিত এবং প্রাণবন্ত রাখতে না পারি- তাহলে একঘেয়েমি আসে এবং ওই কাছে থেকে আনন্দ লাভে ব্যর্থ হই।

একটা কুলি মজুর যেরকম নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায় বালিশে মাথাটা রাখে আর স্বপ্নময় ঘুমে তলিয়ে যায়, বড়লোকরা অনেকেই সেটা পারে না। একবার কোথায় যেন পড়েছিলাম:

বাড়ির মালিক শান্তিতে ঘুমানোর জন্য টাকা ইনকাম করে। আর তার বাসার দারোয়ান টাকা ইনকামের জন্য নির্ঘুম রাত কাটায়। শেষ পর্যন্ত তাদের দুজনের কেউই ঘুমাতে পারে না।


তাই আজকে আমি আলোচনা করব ৫টা জীবন বদলে দেওয়া টিপস, যেগুলো মেনে চললে একজন মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন..


০১. পারিবারিক জীবন যাপন করুন


একটা মানুষের আনন্দের প্রকৃত উৎস পরিবার। মানুষের জীবনে সুখশান্তি পায় পরিবারের মাধ্যমে।

images (20).jpeg

এজন্য দেখা যায়, যাদের পরিবারে অশান্তি তাদের মধ্যে সুইসাইডএর প্রবণতা তুলনামূকভাবে বেশি থাকে। ব্রোকেন ফ্যামিলিতে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভুগে।

তাই আপনার পরিবারকে সময় দেন। টাকা তো জীবনে অনেক ইনকাম করবেন, পাশাপাশি ক্যারিয়ারের বাইরে নিজের পরিবারের জন্য কিছু সময় রাখেন।

যাতে সন্তান অন্তত আপনার বৃদ্ধ বয়সে বলতে না পারে যে, সে একা একা বড় হয়েছে।


০২. কাজটা এনজয় করুন


আপনি যে কাজই করেন না কেন, যদি সেটা এনজয় না করেন- তাহলে সব মূল্যহীন।

রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দু'ধারে তাকিয়ে দেখবেন- কিছু মানুষ রিকশা চালায়, কিন্তু মুখে অকৃত্রিম হাসি।

কিংবা মাটি কাটছে, আর মনের সুখে পান চিবুচ্ছে। তারা জীবনটাকে পানের রসের মত তীব্রভাবে উপভোগ করছে।

আর আপনি আমি হয়তো আমাদের কর্ম ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে ফিটফাট হয়ে যাই এবং হাসি হাসি মুখ করে ডেস্কে বসে থাকি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে মনটা বিষিয়ে থাকে। কখন বের হব.. কখন বের হব.. এই একটা অস্থিরতা নিয়ে সারা দিন পার করি।

images (19).jpeg

সেটা না করে, যে কর্মক্ষেত্রেই আপনি আছেন- সেটাকে পানের রসেরর মত উপভোগ করতে শুরু করেন। জীবনে আনন্দ বাড়বে।


০৩. বৈচিত্র আনেন


একঘেয়েমি কখনোই ভালো লাগে না। জীবনে বৈচিত্রের প্রয়োজন।

আপনি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থানেও থাকেন, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একই দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় আপনার সেই স্থানের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে যাবে। এটা মানব প্রকৃতি।

মাঝে মাঝে নিজের জীবনে বৈচিত্র্য আনতে হয়। সেটা কর্মক্ষেত্রে, পারিবারিক জীবনে, ব্যক্তিজীবনে, সমাজ জীবনে, বন্ধুদের আড্ডায়... সব জায়গায় সর্বক্ষেত্রে।

20200716_202450.jpg

মাঝে মাঝে বন্ধুদেরকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান, কলিগদেরকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে যান, পরিবারে ছোটখাটো পার্টি অথবা ঘরোয়া অনুষ্ঠান করেন অথবা বাচ্চাদেরকে নিয়ে হুট করে চলে যান কোন শিশু পার্কে..

আপনি যে কাজটা রোজ করছেন, মাঝে মাঝে একটু অন্যভাবে করেন। আপনার অফিস ডেস্ক একটু অন্য ভাবে সাজান। রুমের খাটটা একটু নেড়ে ডেকোরেশনটা পাল্টে দেন..

যেভাবে হোক, জীবনে বৈচিত্র্য আনুন। দেখবেন জীবনে আনন্দ আসবে।


০৪. কিছু শখ লালন করুন


প্রতিটা মানুষের কিছু প্যাশন থাকা উচিত। যে মানুষের প্যাশন নেই, সে মানুষটা মানুষ না- একটা যন্ত্র।

আপনার প্যাশন হতে পারে কবিতা পড়া। কিংবা বরশি দিয়ে মাছ ধরা। অথবা বাগান করা.. ঘুড়ি উরানো.. লং ড্রাইভ। আপনার সখগুলোকে মরে যেতে দেবেন না।

images (22).jpeg

অনেক সময় আমরা দেখি, একটা মানুষ যখন কর্মক্ষেত্রের প্রবেশ করে- আস্তে আস্তে তার সখগুলোকে মেরে ফেলে। সে মনে করে এই সখগুলো তার ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর!

এটা ঠিক না। কিছু শখ লালন করতে হয়। এগুলো মানসিক প্রশান্তি দেয়। আমাদেরকে এবং জীবনকে আনন্দঘন করে তোলে।


০৫. নিজেকে আঘাত করুন


সবকিছুর পরেও আমাদের বিষন্নতা আসে। তাই নিজেদেরকে মাঝে মাঝে আঘাত করার প্রয়োজন হয়।

মাঝে মাঝে নিজেকে আঘাত করতে হয় চেতনায়। এর জন্য কিছু মোটিভেশনাল বই পড়ুন। মোটিভেশনাল লেকচার দেখুন।

images (1).png

মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন। কি করছেন, কিভাবে করছেন, কিভাবে করা উচিৎ..

নিজেকে সময় দিন। নিজের জন্য একান্ত ব্যাক্তিগত কিছু সময় আলাদা করে রাখুন।

এই একান্ত নিজস্ব সময়ে আত্মসমালোচনা ও আত্ম বিশ্লেষণ করুন।


এই পাচটি নিয়ম অনুসরণ করলে দেখবেন, জীবন আরো প্রানবন্ত ও উচ্ছল হয়ে উঠবে।



0
0
0.000
2 comments
avatar

আমাদের সবার উচিত নিজেকে প্রাণবন্ত রাখতে প্রতিনিয়ত জীবনকে উপভোগ্য করে তোলা।

0
0
0.000