সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসুন

avatar

লতিফ চাচার মুখে সব সময় এক ঝিলিক হাসি ফুটেই থাকে। ওনাকে যখনেই জিজ্ঞাসা করি চাচা কেমন আছেন বললেই মুখ ভরা হাসি বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ্ বাবা ভালো আছি উত্তর দিতে এক মুহুর্ত দেরী করে না। আমার মনে হয় কি যাদের ঠোঁটে সব সময় হাসি লেগে থাকে তারা মনের দিক থেকেও তাদের হাসির মতোই সুন্দর।

20210506_102401.jpg

20210520_110845.jpg

আমার অফিসে সুন্দর বাগান রয়েছে। অফিসের চারিদিকেই বাগান। পরিবেশটা দারুণ। আমি প্রায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু প্রশান্তির জন্য বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকি। বিভিন্ন ধরনের পাখি ফড়িং প্রজাপতির আনাগনা চলতেই থাকে। মৃদু বাতাশও বয়ে চলে সব সময়। রুমের ভিতরের এসির ঠান্ডা বাতাসের থেকে সেই মৃদু বাতাসটা ঢের ভালো। বাইরের সেই মৃদু বাতাশে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেই শরীরের আত্মা সহ শীতল হয়ে যায়। মনের ভিতরের দানা বাঁধা ছোট ছোট অশান্তি গুলো কেমন যেন সেই মৃদু বাতাসে নিঃশেষ হয়ে যায়।

আমি বলছিলাম লতিফ চাচার কথা। লতিফ চাচা হচ্ছে আমার অফিসের মালির কাজ করে। গ্রামের বাসা তার ময়মনসিংহ। অফিসের বাগানের সৌন্দর্যের একক দাবিদার এই লতিফ চাচা। সারাদিন উনি এই বাগানের পরিচর্যা করেন। বিরামহীন কাজ করেই চলে। ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম চাচা এইভাবে যে বিরামহীন কাজ করেন আপনাকে বিরক্ত লাগে না?
তিনি উত্তরে বলেছিলেন না, একদমেই না। এই বাগানের প্রতি আমার মায়া হয়ে গেছে। এই বাগানের প্রতিটা গাছের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক হয়ে গেছে। এই বাগানের সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক হয়ে গেছে। উনি গাছ গুলোর সাথে আবার কথাও বলে। গাছ গুলো নাকি ওনার কথাও শুনে।

আমরা কিন্তু এই লতিফ চাচাদের মনে রাখি না। আমরা বাগানের সৌন্দর্য দিয়ে অফিস সাজাই। বাগানের মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ তৈরী করি। কিন্তু যিনি এই বাগানটির পরিচর্যা করেন তাদের মনে রাখি না। তাদের শ্রম আর সৌন্দর্যকে অর্থ দিয়েই মূল্যায়ন করি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার 'সোনার তরী' কবিতায় এই বিষয়টি সুন্দর করে ফুটে তুলেছিল। কৃষক দীর্ঘদিনের শ্রম, সময়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে ফসল ফলায় সেই ফসল তরীতে জায়গা হলেও কৃষকের জায়গা সেখানে হয় নিই।
কবি এই কবিতায় সুন্দর করে ফুটে তুলেছিল আমরা সৃষ্টির পিছনে ছুটি, সৃষ্টিকে মূল্যায়ন করি। কিন্তু যিনি সৃষ্টি করেন তাদের মনে রাখি না।

ঠিক তেমনেই আমাদের এই মহান সৃষ্ট জগতের সৃষ্টিকর্তা যিনি তাকেই আমরা ভূলে যাই। পৃথিবীর সব কিছুর একক মালিক যিনি। যিনি কুন(হয়ে যাও) শব্দ দিয়েই এই বিশাল ব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি করেছেন। সূর্য, চন্দ্র, তারকা, গ্রহ উপগ্রহ, গ্যালাক্সি সহ অজানা আরো কত কিছু। তাকেই আমরা ভূলে যাই। যার সৃষ্টিকে আমরা নিজেদের বলে অহংকার করি, গর্ববোধ করি, ক্ষমতার দাপট দেখাই, সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করি, অন্যায় অবিচারের রাজত্ব তৈরী করি। নিজেকেই মহান ব্যাপক শক্তিশালী হিসেবে জাহির করি। প্রকৃতপক্ষে আমরা কিছুই না। তিনি চাইলেই আমাদের সকল ক্ষমতা দাপট সম্পত্তি নিমেষেই ধ্বংস করে দিতে পারেন। আমরা তাকেও ভূলে যাই।



0
0
0.000
0 comments