বাবাদের ঈদ

avatar

সারারাত পাশের রুমে মেশিনের শব্দ শুনতে শুনতে অভ্যস্ত মমিনা, সেরিনা, মেরিনা, জরিনা। মেশিনের শব্দ শুনতে শুনতে তাদের ঘুম ধরে। তারা ঘুমায় পাশে বসে শেফালী অপেক্ষা করে কলিমুদ্দির জন্য। এটা নিত্য দিনের কারবার। তবে রমজান মাসে এই অপেক্ষা দীর্ঘ হয়। কখনো কখনো সাহরির সময় হয়ে যায়। কলিমুদ্দি এই শব্দের মধ্যেই সে তার পরিবারের জন্যে জীবিকা নির্বাহ করে। পাঁচ মেয়ের জন্মদাতা হচ্ছে কলিমুদ্দিন। একটা ছেলের অপেক্ষাটা যে তার এতো দীর্ঘ হবে সে জানতোই না। ছেলের আশা করতে করতে পাঁচটা কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে কলিমুদ্দি। তাই বলে কন্যাদের প্রতি তার ভালোবাসার কোন কমতি নেই। সাধ্যের বাইরে গিয়ে কন্যাদের ভালোবাসতে চায়। বড় মেয়ে আমিনার বিয়ে দিয়েছে। এখন বাকি চারটার জন্য ভবিষ্যত চিন্তায় মগ্ন থাকে কলিমুদ্দি। মাঝে মাঝে টেনশনে থাকলেও আল্লাহ্ ওয়ালা কলিমুদ্দি ওনার সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাত বিশ্বাস রয়েছে। যে সৃষ্টি কর্তা ওনাকে পাঁচটা কন্যা সন্তান দিয়েছে তাদের রক্ষনাবেক্ষন তাদের রিজিক সেই সৃষ্টিকর্তায় ব্যবস্থা করে দিবেন। কেউ যদি কলিমুদ্দিকে বলতো পাঁচ টা মেয়ে নিয়া তুই কেমনে চলবি? উনি খুব সুন্দর করে আল্লাহর রহমতে কথা স্মরণ করিয়ে দেন ঐ ব্যাক্তিকে। একটা হাদিস শুনিয়ে দেয় সবাইকে।

মহান আল্লাহ যখন খুব বেশি খুশি হয় তখন কন্যা সন্তান দান করে।

১৫ রমজান চলছে। কলিমুদ্দি গ্রামের দর্জি। এইসময় কাজের একটু চাপ থাকে। সাড়া বছর সংসারের জন্য যে টুক টাক ঋন করে এই রমজান মাসের বার্তি ইনকাম দিয়ে তা শোধ করে। আশে পাশের সবার নতুন কাপড় কেনার ধুম পরেছে। কলিমুদ্দির মেয়েরা নতুন কাপড় পাবে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত হতে পারে নিই তার মেয়েরা। তাদের বাবা মা তো কিছু বলতেও না তাদের। তারা সকলে মন খারাপ করে আছে। ধৈর্য্য হাড়ায় সব থেকে ছোট্ট মেয়ে জরিনা মা'কে বলেই ফেললো। আম্মা আমাদের ঈদের জামা কবে কিনে দিবা। সবাই তো কিনে ফেলছে বাজারে তো পরে কাপড় পাওয়া যাবে না। তার কথা শুনে বাকি তিনজন ও মাকে বলা শুরু করলো।

তোমরা একটু অপেক্ষা কর তোমাদের আব্বায় তোমাদের জন্য কাপড় আনবে। এই বলে শান্তনা দিল। শেফালিও জানে না যে তাদের কাপড় কিনে দিতে পারবে কিনা। তাদের সবাইকে বুঝিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে সেফালী অপেক্ষা করছে কলিমুদ্দির জন্য। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে সেফালী পাশের রুমে কলিমুদ্দির পাশে গিয়ে বসলো।

শেফালী, কি বেপার তুমি এখনো ঘুমাও নিই? আপনারে ছাড়া আমি কখনো ঘুমাইছি বলেনতো।
হা হা হা, তা তো ঠিক। তো কি মনে করে এখানে। শুনেন আজকে আপনার আদরের চার মেয়ে আমার কাছে জানতে চাচ্ছিল তাদের আব্বায় তাদের নতুন জামা কবে কিনে দিবে আমি তো কোন মতে বুঝ দিয়া ঘুম পারায় দিলাম।
ও তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি তাদের জন্য নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ্। তুমি বরং আমার কাছে একটু সহযোগিতা কর। বলেই কিছু কাপড় এগিয়ে দিয়ে বোতাম লাগাতে বললো। দুজনে এক সাথে কাজ আর গল্প করতে করতে সাহরীর সময় হয়ে গেলো। এভাবেই কাজের চাপে দিন চলে যাচ্ছিল যত, ঈদ ও তোতোই কাছে আসছিল। কলিমুদ্দিও অপেক্ষায় আছে অর্ডারের সবার কাপড় সেলাই করে দিয়ে যে টাকা পাবে তা দিয়ে চার মেয়ের জন্য কাপড় তিনি নিজেই সেলাই করে দিবেন। আর বউয়ের জন্য একটা শাড়ি আর নিজের জন্য একটা লুঙ্গী নিবেন। লুঙ্গী না নিলে হচ্ছেই না তার। যার পরনের লুঙ্গীটা বিধ্বস্ত অবস্তা।

আর মাত্র দুই দিন বাকি। মেয়েরা কান্নাকাটি শুরু। এদিক বাবার কাজের চাপ কাজ না করে দিলেও তো টাকা পাবে না। টাকা না পাইল কিভাবে বাজার করবে ঈদে একটু ভালো মন্দ খাবে কিভাবে মেয়েদের কাপড় বানায় দিবে।

মেয়েদের তো কোন মতেই বুঝানো যাচ্ছে না। এদিক মেয়েরা কান্না কাটি করে শুয়ে পরলো। কালকে ঈদ এখন পর্যন্ত তাদের কাপড় নেওয়া হয় নিই। এদিক আরো কিছু কাপড় অর্ডারের বাকি আছে। অর্ডারের কাজ শেষ করে কলিমুদ্দি খুব খুশি। কারন এখন সে তার চার রাজকন্যার জন্য কাপড় সেলাই করতে বসলেন। সারা রাত কাপড় সেলাই করে ভোর পাঁচটার নামাজ সেরে ঘুমাতে গেলেন। কলিমুদ্দির লুঙ্গি আর বউয়ের জন্য শাড়ি কিনতে পারলো না সেটা বেমালুম ভূলে গেলেন চার কন্যার জামা সেলাই করতে পারার আনন্দে।

সকাল সকাল গোসল সেরে চার কন্যার নতুন কাপড় পরে তাদের আনন্দের যেন শেষ নেই। তাদের কন্যাদের মুখে এক ফালি হাসি দেখে সংসারের সব দুঃখ কষ্ট বেদনা যেন নিমেষেই উধাও হয়ে গেলো।

কলিমুদ্দির মত বাবা আর শেফালীর মত মায়েদের কাছে সন্তানদের খুশিটাই হচ্ছে তাদের দিন শেষে অর্জন।

tea_garden_3.jpg
Source



0
0
0.000
0 comments