হরেক রংয়ের মানুষ

avatar

ফজরের নামাজের পর শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতে টিপতে কখন ঘুমায় পরি কোন ঠিক থাকে না। সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে নয়টায়। ঘুম ভাঙ্গতেই ফোন হাতরাতে থাকি বালিশের নিচে, ডানে বামে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আবিষ্কার করলাম লুঙ্গির ভিতরে ফোনটা ঢুকে আছে। তাও বুঝতে পারছি যখন বাংলালিংক কোম্পানী হতে কল আসে। আর এই কলেই লুঙ্গির অভ্যন্তরে ভোঁ ভোঁ শব্দে কম্পনের সৃষ্টি করে। যাক কম্পনের ফলে সৃষ্ট ভোঁ ভোঁ শব্দের কারনে সহজে ফোনটা হাতে পেয়ে আপন মনে ফেসবুকের নিউজ ফিড ঘাটতে ঘাটতে কখন যে সাড়ে দশটা বাজে গেছে সেদিক খেয়াল নাই। তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেশ হতেই মা আমাকে উদ্দেশ্যে করে ফুপুকে বলতেছে এই যে আপনার নবাব ভাতিজা উঠছে। ওর চালচলন দেখলে মনে হয় ওর আব্বায় জমিদারি রাখে গেছে। সাড়ে দশটায় ওর সকাল হয়। আমি বাজারের ব্যাগ টাকা আর বাজারের লিস্টটা হাতে নিয়ে ফুপুকে বললাম ফুপু, বাবা জমিদার না হইলেও মা এখন বড়লোক্স। আগে মায়ের পেনশন অফিসে গিয়ে তুলতে হত এখন ব্যাংক একাউন্টে আসে। প্রথম প্রথম মা চেকে সাইন দিতে ভয় হাত কাঁপতো। মাস হলেই মায়ের ব্যাংক একাউন্টে টাকা চলে আসে। আর মা খচ খচ করে চেকে সাইন দিয়ে টাকা তুলে। এই কথা বলতেই রান্না ঘর থেকে নবাবজাদা আমার সাথে শয়তানি দ্বারা আমি আসতেছি। আমি আর দাঁড়াই? সোজা রাস্তা ধরে বাজার।

বাজারে আসেই দেখি হই হই কান্ড রই রই বেপার। রাস্তায় এক পাশে লোক জনের ভীর। আমি ভাবলাম। কোন এক্সিডেন্ট হইছে নাকি বাঙ্গালী তো আবার ওয়াশার পাইপ বা পৌরসভার ড্রেন পরিস্কার করলেও চারিদিকে গোল করে ভীর করে। স্বভাবসুলভ কৌতূহলী মন নিয়ে ভীর ঠেলে সামনে গিয়ে দেখি কাহিনী অন্য। এক তরমুজ বিক্রেতার সাথে একজন ভদ্রলোকের বাকবিতন্ডা চলছে। কয়দিন ধরেই তরমুজ কেজি দরে কেন বিক্রি হবে এটা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনায়। তো এই এই ক্রেতা কিভাবে কেজি দরে তরমুজ কিনতে হয় তা জাতিকে শেখালেন।

ভদ্রলোকটি নাকি তরমুজ কেনার জন্য দাম কত শুনতে চাইলে তলমুজ ওয়ালা ৭০ টাকা কেজি বলে। ঐ ভদ্রলোক সব থেকে বড় তরমুজটা বার করতে বলে। সবথেকে বড় তরমুজটা খুঁজে বার করে। ওজন ৯/১০ কেজির মত হবে। ভদ্রলোক তরমুজ কাটে দেখতে চায় মিষ্টি আর লাল আছে কিনা। তরমুজ ওয়ালাও বড় কাস্টোমার পাইছে এই কাস্টোমারকে মুরগা বানাবে মনে মনে মন কলা খাইতেছিল। এই খুশিতে তরমুজ মাঝখান থেকে কেটে কয় এই নেন স্যার তরমুজ লাল রং আর মিষ্টিও অনেক। সব কিছু যাচাই বাছাইয়ের পর ভদ্রলোকটি তরমুজ ওয়ালারে বলে চাচা ঠিক আছে এখন এখান থেকে ২৫০ গ্রাম ওজন করে তরমুজ দেন আমাকে। তরমুজ ওয়ালা রীতিমত ধরা খাইছে। তাদের দুজনের চলছে বাকবিতণ্ডা আশে পাশের লোকজনের ও ভালো ভীর লেগে গেছে। আমি হাসতে হাসতে ভীর ঠেলে বাহির হয়ে বাজার করাতে মনোযোগ দিলাম। পেঁয়াজ আমি নিলাম এক কেজি পাশেই আরেকজন পেঁয়াজ নিল মাত্র ২৫০ গ্রাম। কারণ তার পকেটে সামর্থ্য সেই পরিমানেই। সে আরো কিছু সবজি নিল অল্প অল্প করে। তারা এই অল্পতেই সুখ খুঁজে পায়। আরেক জন আসলো সবজি নিতে দোকানদার দাম যতোই বলছে উনি দরাদরি না করেই ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো ঘুষের টাকার বাজার হবে না হলে কষ্টে ইনকাম করলে এরকম করতো না। অন্য দিকে তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা অন্যান্য ক্রেতারা পরে যায় বিপাকে। কারণ সবার তো আর ঘুষের টাকা থাকে না।

বাজারের ব্যাগ হাতে বাজার থেকে বার হতেই দেখি আজিম ভাই রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওনার রিক্সা তে উঠলাম। পরিচিত রিক্সা সব সময় আমাদের বাসার সামনেই রিক্সা নিয়ে থাকে। জিজ্ঞাসা করলাম কি খবর আজিম ভাই। দিন কাল কেমন যাচ্ছে। সেই আগের মতোই হাসি মাখা মুখে আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো যাচ্ছে। বাসার সবাই কেমন আছে? সবাই ভালো আছে। কিন্তু এই লক ডাউনের কারনে একটু বিপদে আছি। বিপদে থাকবেই না কেন তার সাত সদস্যের পরিবার চলে একমাত্র তার রিক্সা চালায় যা আয় করে তা দিয়েই। তাকে তার বাবা মা কেও দেখতে হয়। এই স্বল্প আয়ের মানুষ গুলো শত কষ্টেও হাসি মুখে থাকে। স্বল্প সামর্থ্য নিয়েও পরিবারের সাথেই থাকে। সেই কষ্টের মাঝেও ওরা শান্তি খুঁজে নেয়। আসলেষেদের মত আমরা কেউ হতে পারবো না।

images (7).jpeg

Source



0
0
0.000
0 comments