ফুটকার সাক্ষী ফুটকায় দেয়......
শুভ রাত্রি, আশা করি বিডি কমিউনিটির সকল সদস্যগণ সৃষ্টিকর্তার দয়ায় ভালই আছেন। আজ আমি আপনাদের কাছে এমন একটি গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি , যে ঘটনাগুলো বাস্তবেও অনেক সময় ঘটে থাকে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
চলছে বর্ষাকাল। চারদিকে পরিবেশটা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই আমাদের পুরনো স্মৃতিগুলো মনে দাগ কাটে। এমনই মনে দাগ কেটেছে আব্দুর রহিমের। বৃষ্টির ফোটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথে এক ধরনের ফুটকা (বৃষ্টির ফোঁটা নিচে পড়লে, যে ফেনার মত সৃষ্টি হয় ।এটি কে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ফুটকা বলা হয়।) তৈরি হয়। সেই ফুটকা দেখে আব্দুর রহিম মৃদু হাসিতে তার পুরো মুখ ভরে গেছে। কিছুক্ষণ পর পরই আপন-মনে হাসছেন।
এমন সময় আব্দুর রহিমের স্ত্রী তার স্বামীর বিষয়টি খেয়াল করলো। তারপর সে তার স্বামী আবদুর রহিমকে হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করল। আব্দুর রহিম কিছু না বলেই এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করলেন।
কিন্তু মহিলারা যে রহস্যময় জিনিসটিকে জানার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়েন , তা হয়তো আব্দুর রহিমের জানা নেই।বীর সৈনিকরা যেমন যুদ্ধ জয়ের আগ পর্যন্ত পিছু হটে না, তেমনি মহিলাদের কাছে কোন জিনিস সন্দেহ হলে, সেই জিনিসটির রহস্য উদঘাটন না করা পর্যন্ত থেমে থাকে না।
যাই হোক অবশেষে আব্দুর রহিমের স্ত্রী সেই যুদ্ধে জয়ী হলেন। তার স্বামীর কাছ থেকে অনেক পীড়াপিড়ির পর, তার স্বামীর হাসির কারণ জানতে পারলেন।
কারণ টি ছিল, বৃষ্টি নিচে পড়ে যখন ফুটকা সৃষ্টি হচ্ছিল, তখন সেই ফুটকা দেখে আব্দুর রহিমের পুরোনো একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। তার বয়স যখন 20 বছর ছিল, তখন তার এক বন্ধুর সাথে ঝগড়া হয়েছিল এবং সে বন্ধুকে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে দিয়েছিল।কিন্তু কেউ তাকে সন্দেহ করিনি এবং সেই খুনের সাজায় অন্য এক নিরপরাধ ব্যক্তির 10 বছরের জেল হয়েছিল।
আঞ্চলিক ভাষায় একটি কথা প্রচলিত আছে, ফুটকার সাক্ষী ফুটকায় দেয়।
image
তাই আজ বৃষ্টির পানি যখন নিচে ফুটকা সৃষ্টি করেছিল, সেগুলো দেখে সে হাসলো এবং মনে মনে ভাবছিল , কই ফুটকার সাক্ষী ফুটকাতো দিল না? এ সব মিথ্যে!
তাই আজ বউয়ের পীড়াপীড়িতে আব্দুল রহিম পূর্ণ ঘটনার বিস্তারিত বলে দিলেন।
বলবেন ই না কেন? বউয়ের সাথে এ যে আত্মার সম্পর্ক। ৩ কথা অর্থাৎ তিন বার কবুল বলার সাথে সাথে বউ যেন, তিন যুগের আপন হয়ে যায়। তাই বউকে অন্য যে কারো চেয়েও বেশি আপন ভাবা যায়। কিন্তু আবার তিনটি কথায় অর্থাৎ ৩ বার তালাক বললে ও যে বউ সবচেয়ে বেশি পর হয়ে যায়, অর্থাৎ ৩ মুখের অচেনা নারী হয়ে যায় ,তা হয়তো অনেক পুরুষই জানেন না! হয়তো আব্দুর রহিম সেদিকটি ভাবেন নি। কিন্তু সম্পর্ক সবার সাথে সব সময় ভালো যায় না। নদীতে যেমন জোয়ার ভাটা আছে, তেমনি সম্পর্কে ও ভাঙ্গন এবং গড়ন দুটোই আছে।
যাইহোক কিছুদিন পর আব্দুর রহিমের বউয়ের সাথে আব্দুর রহিম এর সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছিল না।এমনকি একসময় ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত হয়ে গেল।সেই সময় আব্দুর রহিমের বউ ,তার প্রতিবেশী সকলের কাছে ,তার বন্ধুর হত্যার ঘটনাটি সবাইকে বলে দিলেন। পরে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে পুলিশ এসে আবদুর রহিমকে গ্রেফতার করে এবং জেলহাজতে প্রেরণ করে।
বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা ঘুম থেকে উঠে শুরু করে, ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমাদের মুখ দিয়ে অনর্গল কথা বলতেই থাকি।প্রয়োজনের তাগিদে কিংবা কোন বিষয়টিকে রোমাঞ্চিত করার জন্য, মিথ্যাকে সত্য এবং সত্যকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দিতে থাকি। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, মিথ্যা ক্ষণিকের জন্য ,একদিন সত্যের নিশ্চয়ই জয় হয়। আমরা একসময় নিজেরা নিজেদের ই সত্যটাকে প্রকাশ করে ফেলি।
সত্য কোনদিন গোপন থাকে না।হয়তো রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে অথবা টাকা দিয়ে কিছুদিন ধামাচাপা থাকে। কিন্তু একসময় না একসময় সেই সত্য উদঘাটন হয়ই।
ধন্যবাদ সকলকে। লিখাটি পড়ার জন্য।লেখাতে কোন ভুল করে থাকলে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দিয়ে কমেন্ট বক্সে সহযোগিতা করবেন। আপনাদের সহযোগিতা এবং ভালোবাসায় পেলে , আশা করি এর চেয়ে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। আবারো ধন্যবাদ সকলকে। সৃষ্টিকর্তা সকলকে ভাল রাখুক এবং সত্যের সাথে চলার মন মানসিকতা তৈরি করুক, এই কামনাই করি।
সকলের প্রতি ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছানতে
আমি মোঃ কাউছার হাসান। যেহেতু বাংলাদেশে জন্ম ,তাই নিজেকে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছি। শিক্ষকতা পেশাটিকে খুবই উপভোগ করি। আমি যখন আমার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নতুন কিছু শিখাতে পারি ।আমার কাছে তখন অন্য রকম অনুভুতি হয়। আমিও প্রতিদিন নতুন কিছু করতে পছন্দ করি, আমি নতুন নতুন লোকের সাথে মিশতে পছন্দ করি এবং নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করি। কেবল শিখার জন্য ছোট চেষ্টা করি। ভ্রমণ করেতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। শিখতে ও লিখতে ভালোবাসি। বড়দের কে শ্রদ্ধা আর ছোটদের স্নেহ করার চেষ্টা করি। আমি মনে করি,কাউকে সম্মান করেলে , আমার আত্মমর্যাদা হ্রাস পায় না বরং বৃদ্ধি পায়।