চীনা মাটির গল্প
হটাৎ করে গা গুলিয়ে আসায় হাতের আতরদানি ছিটকে পড়ে ভেঙ্গে গেল। এত সাধের আতরদানি, বাবার প্রথমবার বিদেশ থেকে আসার সময় নিয়ে আসা বাটি, ভেঙ্গে গেল? নিজের মন্দ ভাগ্যকে গালি দিতে দিতে ভূপেন চট করে ঝাড়ু দিয়ে সব চিহ্ন প্রমান লুকিয়ে ফেলল। মা যদি দেখে ফেলে? তবে বকাঝকার আর অন্ত থাকবে না। অবশ্য মা দেখবে কি করে? বিছানার থেকে উঠে বসার শক্তি টুকুও তো আপাতত নেই।
ভূপেনের সমগ্র পৃথিবী জুড়েই শুধু তার মা। ২৪ বছর বয়সী এক তাগড়া জোয়ান ছেলে, অথচ এখনো দিনে একবেলা মায়ের হাতে খেতেই হবে। যদিও এখন তাকে এর ঊল্টোটা করতে হচ্ছে তাও সে খুশী। মায়ের জন্যে কিছু করতে পারলেই তার মন ভরে যায়। এ চিন্তা থেকেই তো দিন চারেক আগে নিজের পাইপাই উপার্জন থেকে মায়ের জন্যে কিছু আম্রপালি কিনে আনা। আর সেই আম খেয়ে এখন ডায়াবেটিস প্রেসার বেড়ে কি যে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা। সেজন্যে এখন প্রকৃতি প্রদত্ত শাস্তি সরূপ ঘর ঝাট দেয়া, রান্না করা, মোদ্দা কথা পরিবারের ছোট ছেলে হিসেব সব গেরস্থালি কাজ এখন ভুপেনের ই উপর। কিন্তু এসব ও তার ভালো লাগে। কি পিকুলিয়ার এক চরিত্র।
সন্ধ্যের সময় ছাত্রীকে পড়াতে এসে ভূপেন বেশ লাভ হয়ে গেল। ছাত্রীর প্রায় দ্বিগুণ আকৃতির মা এসে পড়ানোর ঠিক বিশ মিনিটের মাথায় দুবাটি মিষ্টি রেখে গেলেন। এক বাটিতে সন্দেশ আর আরেক বাটিতে ছানা। পিচ্চিও বেশ চালু আর সাথে রসিক। সুন্দর করে উঠে দাড়িয়ে বলে, “স্যার, আমি একটু বাথরুমে যাই?”। জানে যে তার সামনে স্যার খেতে ইতঃস্তত বোধ করবেন হেন এই কর্ম। বিশ মিনিটের আগে যে আর আসবে না তা অবশ্যম্ভাবী।
সামনে রাখা মিষ্টান্নের দিকে তাকিয়ে এই গৃহশিক্ষক এর প্রথম চিন্তা হচ্ছে কত দাম হতে পারে এই দুধচিনি গোল্লা গুলোর। দু-তিনশ তো বটেই, এর কম হবে না। তার মাসিক বেতনের আট ভাগের এক ভাগ। এদিক সেদিক তাকিয়ে, দরজায় একবার উকি মেরে, একটা বাদে সব মিষ্টি একটা ছোট্ট পলি ব্যাগ এ ভরে ফেললো ভূপেন। বাসায় ছোট বাচ্চা কাচ্চা অনেক। কাকা হিসেবে যদি গোল গোল ডিব্বাগুলোর থেকে আরেকটু আদর বের করা যায়। আর এই করোনা মহামারীর সময় যাদের বাসায় এসব বিলাসিতা চলে, তাদের ছ-সাত টুকরো মিষ্টিতে কিছু যাবে আসবে না।
এরপর ও আরো খানিকখন সময় কেটে গেল, কিন্তু ছাত্রী আর ফেরত আসলো না। এলো তার মা। হাতে একটা ধুসর পেট মোটা চিঠির খাম নিয়ে।
“তা বাবা, অনেকদিন তো পড়িয়ে ফেললে। কিন্তু, ছাত্রির কোন উন্নতি দেখছি না যে?” ডিবী অফিসার মার্কা কাঠখোট্টা গলায় তিনি যেন প্রায় জেরা করা শুরু করে দিলেন।
“কই না তো? পৃথ্বীর সেকেন্ড সেমিস্টারের রেজাল্ট তো খুব ই ভালো এসেছে। যদি আগের গুলোর সাথে তুলনা করেন আরকি” ভুপেন মিনমিনিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিজের যোগ্যতার প্রমান দেয়ার বৃথা চেষ্টায় লেগে গেল।
“না বাবা, এভাবে করে হয় না। তুমি বরং আর এসো না। আমরা বুয়েটের ছেলে ঠিক করেছি একজন। সেই এখন থেকে ওর ম্যাথ আর ফিজিক্স দেখবে”
বেশ খানিকক্ষন প্রায় শুন্য চোখে ছাত্রীর মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে গিয়ে সে বুঝতে পারলো যে, যা হচ্ছে, তা বাস্তবিকই হচ্ছে। তার একমাত্র উপার্জনের উপায়টি ও আস্তে করে বন্ধ হয়ে গেল।
খামটি টেবিলে রেখে আলতো করে সামনে ঠেলে দিলেন তিনি। “আমার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এমন কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা হতে চাই না। আসা করি তুমি বুঝতে পারবে”।
বুকের অনেক গভীর হতে সকল বুহ্য ভেদ করে, নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি দ্বীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল। শেষের রহস্যময় বাক্যটির বিপরীতে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাওয়া প্রশ্নটি এবার সফল ভাবে ভেতরে পাঠিয়ে দিয়ে খামটি নিয়ে বেরিয়ে গেল ভূপেন।
খামটি পেট মোটা দেখে একটু আগের এত অবহেলার পর ও বেশ খুশি লাগছে তার। যাকগে, এরকম টিউশনি সে ও চায় না। পড়াতে এলে, সব পড়িয়ে যেতে হবে, কোন হোমওয়ার্ক দেয়া যাবে না, এগুলো কোন পড়ানোর সিস্টেম? এভাবে করে রেজাল্ট ভালো করা কি যায়? আরো মান সম্মানের ব্যাপার। এসব বলে নিজেকে বুঝ দিতে দিতে ভুপেন হাটতে থাকে। আরো ছ-সাত মিনিট হাটলে কাঠগড়া বাজার, সেখান থেকে সোজা বাসা।
হটাৎ কি মনে হলো, পকেট থেকে টান দিয়ে খামটা বের করে ফেলল সে। খুব আলতো করে খুলে দেখে ভেতরে বেশ কিছু টাকা। তার মাসিক বেতন দুহাজারের থেকে অনেক বেশি। আর সাথে একটা চিঠি। তার ছাত্রী পৃথ্বীর চিঠি, কিন্তু তার মা কেন এই চিঠি খামের ভেতর দিল? তাজ্জবের বিষয়!
প্রায় পাচ মিনিট সময় লাগিয়ে পড়ে ভুপেন বুঝতে পারলো যে , এ যে সে চিঠি নয়। এ এক প্রেমপত্র। তার ছাত্রী তার উদ্দেশ্যে লিখে খুব কৌশলের সাথে খাম এ ঢুকিয়ে দিয়েছে। চিঠির শেষ পাতায় আবার লাল লিপস্টিক দিয়ে একটা ঠোটের ছাপ আকা। আর তার নিচে গুটিগুটি অক্ষরে লিখা, “আমাকে ফোন করবেন কিন্তু”
দুই যোগ দুই পাচ মিলে গেল ভুপেনের। তার ছাত্রী এবয়সে এসে প্রেমে পড়বে আর মা সেটা লক্ষ করবে না এ এক অসম্ভব বিষয়। তাই হাজার দশেক টাকা ধরিয়ে দিয়ে আপদ বিদেয় করে দিল।
সে জানে যে এসবই আকাশ কুসুম কল্পনা যা কোন দিন হবার নয়। চিঠিটা সযত্নে রেখে দিয়ে রাস্তার ওপাশের শাইনেপুকুর সিরামিকের দোকানের দিকে হাটা দিল সে। যদি একই ডিজাইনের আরেকটি আতরদানি পাওয়া যায়।
Hah! Do I sense a subtle art of bribery inside the envelope? 😉
Lol.. Sudtle yet honest.. Mum wants the best thing for her kids.
সুন্দর ছোট গল্প। মনে হচ্ছে যেন সত্যিকারের ঘটনা পড়ছি।
সত্য আর কল্পনার মিশেলে লিখা এই গল্প ভাই। ফিকশনের আসল রুপই হল এটা। বাস্তব আর কল্পনার খেলা।
বোঝাই যায়। টিউশনির ক্ষেত্রে লাকি ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার ছাপ আছে লেখায়। 😄
মিষ্টি চুরির ক্ষেত্রে ভাগ্য সাথে ছিল। অন্য সব ক্ষেত্রে তেমনটা নয়।
সত্যি সত্যিই হয়েছে নাকি এমন অভিজ্ঞতা!
সত্যি সত্যিই হয়েছে এমন অভিজ্ঞতা ভাই। কিছু কল্পনার মিশেল তো অবশ্যই আছে। কিন্তু মুল তত্ত্ব পুরোপুরি সত্য।
স্টুডেন্ট লাইফের এই স্মৃতিগুলোই ভবিষ্যৎ জীবনের প্রেরণা হয়ে কাজ করে।
দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়েও শেষটায় এসে মনে হাসি এসে গেলো। ভালো ছিল👌
ধন্যবাদ ভাই। ভূপেনদের সাথে এমনই হয় :v
প্রথমে তো মিষ্টি দেকে ভাবছি জামাই আদর করছে। ছাত্রীর মায়ের নিয়ত খারাপ। পরে তো দেখি আসলেই শুধু ছাত্রীর মা এর না ছাত্রীর ও নিয়ত খারাপ। মাঝখানে চিপায় পরলো ভুপেন।
যাই হোক আতরদানী পেলেই হল।
আতরদানি পাওয়া যায় নি ভাই। সে জন্যে ভূপেনের কিনে আনা ঝাড়ু ভূপেনের পিঠেই ভেংগেছে:v
কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আরকি। তবে ভূপেনদের স্মৃতিতে সময়ে সময়ে ঝাড়ু পিটা গুলো বেশ জায়গা করে নেয়। তবে ঝাড়ু পিটা না খাইলেও মায়ের হাতে কম মাইর খাই নাই।
সত্যবচন, মার না খেলে হয়ত জীবন দর্শন হয়ে উঠতো না।
অনেক আছে এমন ছোট বেলায় মাইর না খাওয়া আলালের ঘরের দুলান এখন বখে যাওয়া সন্তান।
এটা তো ভাই ডিপেন্ড করে বড় হবার পরিবেশের ওপর। তবে এটা ঠিক যে বাবা মা এর দেয়া শিক্ষা ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন।
পরিবেশের কৃতিত্ব সব খানেই।
আপনি দেখি বাংলা লিখা শুরু করেছেন! ইংরেজিটা ধার হিসেবে দেওয়া যাবে!
ধন্যবাদ ভাই৷ আপনাদের দোয়ায় চেষ্টা করে যাচ্ছি। যদি কখনো ভালো লিখতে পারি আরকি।
Vule gechilam vai sorry 💔
Hi @zayedsakib, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON