Struggling lifestyle | হারতে রাজি নই
নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এমন অবস্থা দেখতে দেখতেই বড় হয়েছি। বাপের অপকাজে টাকা ব্যয় করা আর ছেলেমেয়ের চাহিদা তালাবন্ধ করে রাখা এমন সংসারের কথা বলছি। বাপের জমাজমি, পুকুর-বিল, ছোট্ট একটা চাকুরী যেনো থেকেও নাই। বছর শেষে একটাকাও পুঁজি নাই বরং মাস অন্তর ৪-৫ হাজার টাকা দেনা। মাস শেষে কামাইয়ের ৭০% নিজের খরচে ব্যয় হয়। ৩০% দিয়ে আর ৩ জন চলে। এমন এক ঘরের কথা বলছি। আসলে এই হিসাবগুলোই আমাকে শহর এবং গ্রামের পার্থক্য বুঝায়, উন্নত জীবন এবং দায়পারি দেওয়া অভাবী জীবনের ঘটনা বুঝায়।
যাই হোক, দিনশেষে আমরা একটি পরিবার অনেক সংগ্রাম করেই এগিয়ে যাচ্ছি। বিশেষকরে আমি এবং আমার মতো অনেকে। গ্রামের চিরচেনা একটা বাস্তবতা হলো, একজনের কামাইয়ের টাকা দিয়ে পরিবারের বাকিসবাই চলে বা চলতে চায়। এছাড়া অহেতুক অহিসাবি জীবনযাত্রা তো চলছেই।
এক সময় গ্রামের ছেলেরা গাঞ্জা, ইয়াবা, মদ নাম শুনলেই কেঁপে উঠতো। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তা আজ গ্রাম পর্যায়েও অধিকাংশের ঘরের দারপ্রান্তে। এমন এক অবস্থায় গ্রামের ৫০%+ ছেলেপেলে আজ সিগারেট, গান্জার সাথে সম্পৃক্ত। ছোটবেলা হতে যাদের সাথে খেলাধূলা করে বড় হয়েছি, যারা আমার বন্ধু, আজ তাদের দিকে তাকাইলে একসাথে ঘোরাঘুরি তো দূরের কথা কাছে যেতেই মন চায় না। এতোটাই নেশাগ্রস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন বলেন। বাড়ি থেকে বের হইলেই তাদের সাথে দেখা হবেই। অনেকদিন নিষেধ করেছি এগুলো খাইস না। ভূল পথে পা বারাইস না। এই বয়সে কি আর এগুলো উপদেশ শোনার টাইম আছে। চলছে তো চলছেই। না পারি সইতে, না পারি সম্পর্ক নষ্ট করতে।
দেখা হইলেই বন্ধু খাবি নাকি? খেয়ে দেখ, মজা আছে, পিনিক আছে, টেনশন থাকবে না, ফুরফুরে লাগবে এমন সব নানান ধরনের কথা। আর মাঝেমাঝে ১০ টাকার আবদার করবে। বিড়ি খাওয়ার জন্য। এমন অবস্থা এখন গ্রামের এখন প্রত্যন্ত অন্চলেও। বিষয়টা শুধু এখানেই থেমে নয়, আমরা সবাই জানি, গ্রামের মানুষ অধিকাংশই একটু কম শিক্ষিত, লেখাপড়ার প্রতি কোনো আকর্ষন কিংবা প্রয়োজন কিছুই নেই বলা যায়। যে কয়টা শিক্ষিত মানুষ রয়েছে, তাদের স্বভাব আর বাকী অশিক্ষিত মূর্খদের স্বভাবের মধ্যে অমিল খুজে পাওয়া যায়না। এমন সব পরিবেশে কতোজনই ঠিকঠাক টিকে থাকতে পারে? ভিতরে যে বড় হওয়ার কিংবা সৎ থাকার প্রচেষ্টা হারিয়ে যায়। চারদিকে এক অসামাজিক আর হিংসাত্বক প্রতিযোগিতায় ভরপুর।
কথাগুলো এজন্যই বললাম, ১ এ তে মধ্যবিত্ত পরিবার ২ এ তে এমন সব পরিবেশের মধ্যদিয়ে পার হচ্ছি। প্রতিনিয়তই পরিবেশের এবং পরিবারের কাছে যেনো হার মানতে হয়। তবুও পিঠ সোজা করে বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এক প্রচেষ্টা নিজের মধ্যে খুজে পাই। নষ্ট হইলে সেই কবে থেকেই হয়ে যেতাম। আল্লাহ রহমত সবকিছু বুঝার এবং বিবেচনা করার এক শক্তি উপর ওয়ালা উপহার দিয়েছেন।
পরিবেশ পরিস্থিতি কিংবা পরিবারের অবহেলা, যেটাই আসুক। সব ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় প্রচেষ্টা ছিলো, আছে, থাকবে। হারতে আমি রাজি নই। গ্রামে বড় হইলে অনেক কিছু শিখতে শিখতেই বড় হতে হয়। যেগুলো বিষয় বই খাতায়ও খুজে পাওয়া যায়না। সঠিক মানুষ হওয়া এবং সৎ পথে বড় হওয়া দূস্কর। চারদিকে আধারে ভরা। আলো খুঁজতে গেলে আধার ডিঙানোই চ্যালেন্জ।
এসব কথাগুলো হয়তো না বললেও পারতাম, কিন্তু আপনাদের সাথে শেয়ার করে কিছুটা শক্তি এবং মন হালকা হলো।
ধন্যবাদ সবাইকে।
0
0
0.000
নেশার কথা শুনলেই গা শিউরে উঠে, যাইহোক নেশা থেকে দূরে থাকিস । ভালো লিখেছিছ
Congratulations @yeakub50! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Do not miss the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
নেশা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের যুব সমাজকে। প্রথম সিগারেট দিয়ে শুরু হয় , তারপর আস্তে আস্তে আসক্তি আসে অন্য গুলোতেও।
যা-ই হোক। মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েন খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখায়, ধন্যবাদ।
সুন্দর ফিডব্যাকের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে বড় ভাই ।