চিরকুট (শেষ অংশ)

avatar
(Edited)

কিছুক্ষন হুস ছিল না। তার আগের কথা মনে নেই। স্টিয়ারিং মুখ থুবরে পরে আছে আকাশ। মাথা দিয়ে গরিয়ে রক্ত গাল বেয়ে ঠোটের কোনে ঢুকছে। নীলা কাঁদছে অঝোরে আকাশ বুঝতে পারছিল না কে কাদঁছে। আজরাইল যখন কাছে চলে এসেছে তখন আকাশ বুঝতে পারছে এটা নীলা। আকাশ বুঝতে পারছে তাকে টানে হিচেড়ে এম্বুল্যান্সে তুলছে। রক্তা মাখা শরীর আর এম্বুল্যান্সের শব্দ এইসব আগে থেকেই নীলা ভয় পেত। কিন্তু আজ সে সকল ভয় কে উপেক্ষা করে আকাশকে টানে হিচড়ে এম্বুল্যান্সে তুলছে। ভিতরে নীলা গলা ফাটিয়ে কাদঁছে। এক বার রেসপন্স কর প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া আর কোথ্থাও যাবো না। প্লিজ কথা বল। কথা বল আকাশ কথা বল। যত ইচ্ছা আমাকে বকা দিও কিন্তু এভাবে আমাকে রেখে চুপ থেকো না। যত ইচ্ছা আমার কাছে চিরকুট গোপন করিও কিন্তু প্লিজ রেসপন্স কর। আকাশ চাইলেও আর রেসপন্স করতে পারছে না। চোখ দুটো বড় বড় করে শুধুই তাকিয়ে আছে।

এখন নীলার ঘরে আকাশের অবাধ বিচরন। সে এখন অবাধে যাতায়াত করে। তার জন্য এখন আর কোন প্রবেশদ্বারের প্রয়োজন পরে না। নীলার রিডিং টেবিলে গিয়ে বসে থাকে, মাদুরে গিয়ে বসে থাকে আকাশ। যখন সকালে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করে নীলা তখন আকাশ পাশে ওয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে নীলাকে অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

বিকালবেলা যখন কফির কাপ হাতে বাড়ান্দায় গিয়ে বসে নীলা তখন আকাশ তার পাশের চেয়ারে গিয়েই বসে। আকশকে খুব ভালো লাগে যখন দেখে তার চেয়ারটাতে এখনো কাউকে জায়গা দেয় নিই নীলা। এখনো ফাকা রেখে দিয়েছে। এখনো সে যত্ন নেয় তার চেয়াটিকে। ময়লা হলে পরিস্কার করে আর আকাশের কথা ভাবতে ভাবতে কান্না করে। তখন আকাশের চোখ দিয়েও অশ্রু গড়ায়। আকাশ তার চোখের পানি মুছে দিতে চেষ্টা করে কিন্তু তাতে তো কোন লাভ নেই।

আকাশ বসে নীলার পাশে, হাটে তার আগে পিছে। নীলার পাশে গিয়ে শুয়ে পরে। নীলা শুধু দেখতে পায় না। তবে মাঝে মধ্যে দু একবার শরীরের আভা টের পায়। তখন নীলার গা ছম ছম করে। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে নীলা একটি গোলাপ খাম হতে রক্তমাখা একটি চিরকুট বার করে পড়তে থাকে। চিরকুটে বড় বড় হরফে লেখা “যেদিন তুমি ভালোবাসবে না, সেদিন আমি আর রইবো না।” নীলা পড়তে শুরু করলেই একটা অদ্ভুদ ধরনের সুর ভেষে বেরায় নীলার ঘরময়। যেই প্রান্তেই থাকুক না কেন আকশ এই সুরের টানে তার কাছে আসবেই। সেই শুরু একাকার হয়ে যায় নীলার জলজ্যোতি। চোখে মলিন কাজল রেখা জলের কারনে দিক হারিয়ে ফেলে, কন্ঠে কাঁদে কুহু কেকা, কপালে নীলার অশ্রু রেখা। নীলার নিজের উপর নিজের অভিমান।

মাঝে মধ্যেই ফোন আসে। সবাইকে বলে ভালো আছি। এই ভালো আছি শব্দের মধ্যে কত যে বদনা লুকিয়ে আছে সেটা একমাত্র নীলা জানে। একটি মাত্র ফোন কল নীলার জীবনটিকে শেষ করে দেয় এটা নীলা ভাবতে থাকে। কখনো বাথরুমের দরজা বন্ধ করে হু হু করে কাঁদে আর নিজেকে কষ্ট দিতে থাকে। বলতে থাকে আকাশ তো তার কোন ক্ষতি করে নিই। বরং জীবনের সব গুলো পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখন আকাশ তাকে পথ দেখিয়েছে। জীবন কিভাবে উপভোগ করতে হয় তা শিখিয়েছিল। সেই আকাশকে কষ্ট দিয়ে মরিচিকার পিছনে ছুটছিলাম। কেন সে আকাশকে কষ্ট দিল, আকাশের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল এই প্রশ্ন নীলাকে ঘুমাতে দেয় না। আকাশের মৃত্যুর জন্য সে নিজেকে দায়ী করে। তাই সে তার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আাকাশের স্মৃতি গুলো নিয়েই বেঁচে থাকতে চায়।

IMG_20190414_210826.png

Source

চিরকুট প্রথম অংশ



0
0
0.000
2 comments
avatar

গল্পটি অনেক সুন্দর হইছে ।গল্পকি নিজেকে নিয়ে লেখা নাকি...

0
0
0.000
avatar

হা হা হা! না ভাই। গল্প নিজেকে নিয়ে লেখা হইলে তো আজকে গোরস্থান থেকে আপনার রিপ্লাই দিতে হত।
তবে নিজেকে নিয়ে এর আগে লিখেছি। আরো লিখবো।
ধন্যবাদ আপানকে কষ্ট করে পড়ার জন্য।

0
0
0.000