অটো রিক্সা

রাতে তো সহজেই ঘুম ধরে না। বিছানার এদিক ওদিক করতে করতেই রাত তিনটা বাজে যায়। সকালে উঠতেও দেরি হয় প্রতিদিন। ঘুম ভাংলেও এই উঠতেছি উঠতেছি করতে দেরি করেই ফেলি। প্রতিদিনের মতো আজকের দেরী করে উঠে দ্রুত ব্রাশ গোসল করে কোন ভাবে প্যান্ট শার্ট পরে বার হয়ে গেলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। মায়ের ও আবার ডেইলি রুটিন আমাকে নাস্তা করতে বলা আর আমিও প্রতিদিন দেরী হয়ে যাচ্ছে মা বলেই তারাহুরা করে বার হয়ে যাই।

ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাতে উঠলাম। নতুন রিক্সা তাই বসেও বেশ আরাম। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম রিক্সা নতুন মনে হচ্ছে কবে নিছেন। বলে এই তো সপ্তাহ খানেক হবে। রিক্সাটা নতুন কিনেছে ক্ষুদ ঋন প্রদান করে এমন এনজিও থেকে লোন নিয়ে। কিস্তিতে টাকা শোধ করে।

আমি কইলাম এই সব রিক্সা যে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ব্যাটারী চালিত রিক্সা তো আর চলতে পারবে না। ওমনি রিক্সার স্পিডটা কামায়া আমার দিকে হালকা ঘুরে তাকালো। তারপর তালব্য শ দিয়ে দিয়ে শুরু করে হ, ম, তারপর 'চ-বর্গীয়' শব্দ দিয়ে রিক্সা ওয়ালা ভাই টা তার ভাষন শেষ করলো। আমি কিছুক্ষণের জন্য থ হয়ে গিয়েছিলাম।

তারপর মৃদু স্বরে আমাকে বললো, স্যার আমরা তো গরীব মানুষ। আমরা কি করমু। সরকারের লগে তো মারামারি করবার পারমু না। পেটের ক্ষুধার লাইগা, কিস্তির লাইগা চুরি করমু ছিনতাই করুম, গাঞ্জা বেচুম আর কি করুম। জীবন চালানোর তো লাগবো।

হাজার হাজার রিক্সা ভ্যান চালক জীবিকা নির্বাহ করছে এই অটোরিক্সা ভ্যান গুলোই দিয়ে। কত পরিবারের স্বপ্ন রয়েছে সেই চাকা গুলোতে। যেই চাকা গুলোই চলছে বিরামহীন ভাবে।

হ্যাঁ এই রিক্সাগুলোর নেগেটিভ দিক আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। হুট হাট টার্নিং, দুর্বল ব্রেকিং, বিপদজনক গতি এইসবের ফলে অনেক এক্সিডেন্ট ও হচ্ছে। কত মানুষ পঙ্গু হয়েছে আবার কত মানুষ জীবন ও দিয়েছে। মহাসড়কে এবার এগুলো মরণবাহন ছাড়া কিছুই না। আচ্ছা নেগেটিভ দিক নাই এমন কোন কিছু কি আছে?

এই অটোরিক্সা গুলোর কারনে কত যে বেকার মানুষ বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে। আমাদের মত যাত্রীরাও পূর্বের চেয়ে কম সময়ে আর কম টাকায় যাতায়াত করতে পারছি। নিঃসন্দেহে এই ব্যাটারী চালিত রিক্সা ভ্যান গুলোই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নতুন একটা সুবিধা যোগ করে দিয়েছে।

যেহেতু সুবিধা অসুবিধা দুটোই রয়েছে সেহেতু অসুবিধা গুলোই ফাইন্ড আউট করে এগুলোর সমাধান করা উচিত। আমার মনে হয় না অসুবিধা গুলোই খুব বড় কিছু। মহাসড়কে চলাচল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম, রিক্সা ভ্যানের জন্য কম গতি সম্পন্ন মোটর ও তাদের ড্রাইভিং এর জন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা উচিত।

আর যদি নিষ্ঠুরভাবে হাতুরী পেটা বা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেটা আসলে রিক্সাকে না হাজার হাজার পরিবারকে বুলডোজার দিয়ে পিশে দেওয়া হচ্ছে। তাদের স্বপ্ন গুলোকে হাতুড়ি সেটা করা হচ্ছে। তাদেরকে হালাল রুজির পথ থেকে সরিয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসার মত সমাজ বিধ্বংসী পাপে জড়িয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে আইন সৃংঙ্খলা থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চ থেকে নিচু পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রেই খারাপ প্রভাব পরবে।

তাই মাথা কাটার সিদ্ধান্ত না নিয়ে মাথা ব্যথা দূর করার পদ্ধতি বার করা উচিত। আমাদের মাথা ব্যথা হলে মাথা কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর যদি হয় সেটা গরীবের মাথা তাহলে তো কোন কোথায় নেই। এক কোপে শিরচ্ছেদ।

Source