সাম্প্রদায়িক ঘৃনা ও একটি অনিশ্চিত সম্পর্ক (২য় অংশ)

avatar

মোবাইলে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ "I'm Sorry"। চয়নের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কে মেসেজটি পাঠালো। রিপ্লাই দিল
-কে আপনি?
-আপনি আমাকে চিনতে পারেন নিই? আমি আপনার স্টুডেন্ট নেহা।

এইচ এস সি পরীক্ষার পর বসে না থেকে নেহা কম্পিউটার শিখতে যায় প্রতিদিন। অত্যন্ত মেধাবী ও রূপবতী মেয়ে। তার রেশমি কালো চুলের ঢেউ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। খোলা চুল যখন অবাদ্ধ হয়ে বাতাসে উড়ে চয়ন পিছন থেকে লক্ষ করে হাড়িয়ে যেত সেই চুলের গভীরতায়।

চোখের চাহনি প্রথম দিনেই বুক ভেদ করে এপার ওপার করে দিয়েছিল। চোখে চোখ পরলেই ভিতরে সা-রে-গা-মা বেজে যেত চয়নের।

তার হাসিতে আছে জাদু মৃদু হাসিতে ঝড় উঠে যায় চয়নের হৃদয় হয়ে যায় এলোমেলো। একটু হাসিতেই বাম গালে টোল পরে যায়।

কম্পিউটার ক্লাসে সে ঠিকঠাক ভাবেই করছিল। প্রতিদিনেই সময় মত আসতো সময় মতোই চলে যেত। তবে কিছুদিন পরে থেকেই কেউ একজন থাকে ফলো করে। সে কি কাপড় পরেছে, কখন আসছে কখন যাচ্ছে সব কিছুই মেসেজ করে বলতে থাকে। এইভাবে টানা কয়েকদিন করতে করতে উত্যক্তের মাত্রা সহ্যের বাহিরে চলে যায়। সে অনুমান করতে থাকে এই কাজটা চয়ন করছে। কারণ চয়নের কাছেই তার নতুন নাম্বার টা রয়েছে। যখন কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল ঠিক তখনেই ভর্তি ফর্মে নাম্বারটা দিয়েছিল। বিরক্ত মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাওয়ার নেহা তার ভাইকে বিষয়টি খুলে বলে। এদিক তার ভাই চয়ন সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে যে চয়ন এই ধরনের কাজ করবে না। সে চয়নের সাথে বিষয়টি খুলে বলে জানতে পারে যে আসলেই এই কাজ চয়নের না। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এটা নেহার বান্ধবীর এক কাজিন তার বান্ধবীর ফোন থেকে নাম্বারটি সংগ্রহ করে তাকে বিরক্ত করতো। পরবর্তীতে সেই ছেলেকে তার ওষুধ সময় মত দেওয়াতে সে আর পরবর্তীতে কোন সমস্যা করে নিই।

নেহা প্রথমে চয়নকে সন্দেহ করায় নিজেকে একটু অপরাধী বোধ করাতেই চয়ন কে দুঃখ প্রকাশ করে মেসেজ দিয়েছিল ভুল বোঝার জন্য।

এদিকে নেহার মধ্যে একটু একাকিত্ব কাজ করছিল। সে আবার তার এক ফুপাতো ভাই জনির প্রেমে পরে যায়। তার সেই জনির সাথে তার কথাবার্তা চলতে থাকতো। নেহা ভাবতো যে জনিও তাকে পছন্দ করে। কিন্তু পরবর্তীতে জনি তাকে তার গার্ল ফ্রেন্ডের বেপারে বলাতে নেহার দিল চুড় চুড় হো গিয়া। তারপর থেকে সে নিজেকে খুবেই একা ভাবতে শুরু করলো। এই মুহুর্তে তার কাউকে প্রয়োজন ছিল। এদিক চয়নের সাথে মেসেজ দেওয়া নেওয়া করতে করতে একটা ভালো সম্পর্কের দিকে আগাতে থাকে। দুজন দুজনকে ভালোবাসতে শুরু করে। জনি কে না পাওয়ার যে শূন্যতা সে চয়নের মাধ্যেই পূরণ করতে থাকে।

এদিক চয়ন নিজেকে তার মধ্যে হাড়িয়ে ফেলে। চয়ন দোটানার মধ্যে পরে যায়। সে আসলে কি করবে। এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে নাকি এখানেই শেষ করবে। কারণ দুজনের জাতিগত পার্থক্য রয়েছে। নেহা ছিল বিহারী অপর দিকে চয়নের পরিবার হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের নেতৃত্বেই অত্র অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ হয়। পরিবারের অনেকে শহীদ হয়ে যায়। সে দিক থেকে দুজনের পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করাটা অনেকটা দুরূহ। এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে দুজন দুজনার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে সেটা তারা ভাবতেও পারে নিই।

তাদের পরিবারের সাথে যে বিহারীদের একটা বিবাদ আর ঘৃনা রয়েছে। এই বিবাদ এই ঘৃনা তার সম্পর্কের মাধ্যমেই কবর দিতে চায় চয়ন। আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরী হলে অবশ্যই নিজেদের মধ্যে ঘৃনা হতে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তৈরী হবে। পরবর্তীতে তার পরিবার যে রাজনৈতিক ভাবে অনেকটা পিছিয়ে পরছে সেটাতেও লাভবান হবে। কারন মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে বিহারী। বাঙ্গালী বিহারীর মধ্যে সুসম্পর্ক হলে পরবর্তীতে রাজনীতির একটা বড় সাপোর্ট পাওয়া যাবে। কারন এইখানকার রাজনীতিতে বিহারীদেরকে ঘৃনা করে কখনো জয়লাভ করা সম্ভব না। তাদের সম্পর্ক অটোমেটিক ভাবেই রাজনৈতিক একটা রূপ ও নিতে থাকে।

এদিক চয়নের মা অত্যন্ত ধার্মিক ও পর্দার মধ্যে সব সময় থাকতে পছন্দ করে। চয়নের মায়ের পছন্দ না কোন মেয়ে পর্দা ছাড়ায় বাহিরে ঘুরে বেরাক। মাথার চুল খোলা রেখে ঘুরে বেরাক। চয়নের সাথে এই মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে চয়নের মা জানতে পেরে চয়নকে সাবলেন করে দেয় এমন মেয়ের সাথে যেন কোন প্রকার সম্পর্ক না থাকে। চয়ন তো নেহাকে কথা দিয়েই ফেলেছে সে আমৃত্যু তার সাথেই থাকবে। সে কখনো তার কথার বরখেলাপ করবে না। সে ওয়াদাবদ্ধ।

চয়ন নেহাকে তার মায়ের অপছন্দের কারণ গুলো তাকে বলে। নেহাও চয়নকে পাওয়ার জন্যে সব কিছুই করতে পারে। নিজেকে যে কোন পর্যায়ে পরিবর্তন করতে পারে। সে চয়নকে বলে যদি এটাই হয় মায়ের অপছন্দের কারণ তাহলে মায়ের পছন্দের হওয়ার জন্য যা যা করতে হবে আমি করবো। মা যেমনটা চায় তেমনটাই হবে, ইনশাআল্লাহ্।।

images (8).jpeg
Source

প্রথম অংশ



0
0
0.000
0 comments