সাধারণদের অসাধারণ ভালোবাসা

avatar
(Edited)

সাধারণ মানুষের ভালোবাসা গুলো অসাধারণ। আপনি তাদের ভালোবাসা দিলে আপনাকে তারা তার দ্বিগুণ ভালোবাসা দিবে। তাদের ভালোবাসার মধ্যে কোন ভেজাল নাই, নাই কোন স্বার্থ। মন উজার করে দিয়ে ভালোবাসতে জানে। নিজেকে নিঃস্ব করে দিলেও সে আপনার ভালোবাসার প্রতিদান আপনার থেকে কয়েকজন বেশি ভালোবাসা দিয়ে দিবে। আপনি আপনার চারপাশে তাকালে এরকম অনেক অসাধারণ মানুষ পাবেন। শুধু দেখার মত চোখ ও মন থাকতে হবে।

একটি ছোট্ট ঘটনা বলি। বাজারে কিছু সবজি নিতে গিয়েছিলাম। সব কিছু নেওয়ার পর কলা নি য়ে পিছনে ঘুরতেই দেখি ৩০/৩২ বছর বয়সের এক ছেলে একটা ছোট্ট টুকরিতে কয়েকটা কাবজি লেবু নিয়ে বসে আছে। ভালোই হল গরমের এই রোজায় ইফতারে লেবুর সরবতের চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে রে না। আমার অবশ্য লেবুর শরবত এমনিতেই খুব পছন্দের। লেবু গুলোও সুন্দর ছিল। লেবু গুলো এক্কেবারে টক টক করে দেখে আছে।

লেবু ওয়ালারে বললাম কেমন জিনিস? ঐ চোখ উল্টিয়ে আমাকে কি জানি বলে। আমি অবাকই হলাম বেটায় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করে দেখি? জিজ্ঞাসার চোখে আমি না বুঝে পাশের দোকানির দিকে তাকাতেই উনি বললো বেটায় বোবা কথা বলতে পারে না। তয় লেবু গুলো ভালো নিতে পারেন।

আমি মনে মনে ভাবলাম জিনিষ ভালো সেটি না হয় বুঝলাম কিন্তু এর সাথে কথা বলবো কি করে। দরদাম করবো কি করে? আমি তো ভাই ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলতে পারি না।

যথাসাধ্য চেষ্টা মত হাত পা চোখ সর্বশক্তি লাগায় দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম হালি কত? সে ইশারা করে দুই হাতের দশটি আঙ্গুল তাক করে দুই বার দেখিয়ে বুঝালো ২০ টাকা হালি। যাক সাহস পেলাম। বুঝাইতে তো পারতেছি।

হাত পা নাড়ায়া তারে জিজ্ঞাসা করলাম জিনিষ কেমন? সে আমারে ইশারায় বুঝায় দিল মাল পুরাই মাখন। নিলে লাভ ছাড়া লস নাই। হা হা তারপর তার সাথে ইশারা ইঙ্গিতে তিরিং বিরিং করে আজাইরা কথা আরো কিছুক্ষন বললাম। মজাই লাগতেছি। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে ঝোকে ঝোকে চার হালি লেবু নিয়ে নিলাম। দাম হবে ৮০ টাকা আমি একটা নট বার করে দিয়ে রাখতে বললাম। সে আমাকে ৪০ টাকা ফেরত দিল। আমি তাকে ২০ টাকা বেশি দিচ্ছিলাম সে আবার ২০ টাকা কম নিচ্ছিল। আমি ভাবলাম সে হয় তো বুজে নিই আমার কথা। কিন্তু সে তার ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল এভ্রিথিং ওকে। এভ্রিথিং কেমনে ওকে সেটা তো আমি তাকে বুঝাইতে না পেরে আবার পাশের দোকানির আশ্রয় নিলাম।
উনি ওনার সাথে হাত পা চোখ নাক মুখ নোহায় চরায়া আলাপ শেষে হাসতে হাহতে কইলো ভাই আপনি জান। উনি দাম ঠিকেই নিছে। আপনারে ওনার ভালো লাগছে তাই ২০ টাকা কম নিছে। ওনার নিজের গাছের লেবু সমস্যা নাই।

তারপর আমি খুশি হয়ে চলে আসার সময় একবার ঘুরে তাকিয়ে দেখে চলে আসলাম। ততক্ষনে সে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল।

আরেকটা ঘটনা বলি। আমি অফিস থেকে আসার সময় অটো ওয়ালার সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে আসতেছিলাম। লক ডাউনে যাত্রী সংখ্যা কম। পরের দিন সকালে যখন অফিস যাবো ঠিক ঐ অটোওয়ালার দেখা ওনার গাড়িতে উঠতেই বললাম ভাই আজকে একটু তারা আছে যলদি ছাড়তেন। উনি অবশ্য আমার অনুরোধটা শুনলো। আমাকে একা নিয়ে রওনা দিলেন। সাধারণত এই কাজ কোন অটোড্রাইভার করে না। আমিও অবশ্য অটো থেকে নামে তাকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পোষায় দিলাম।

পরের দিন আবার অফিসে যাওয়ার সময় ঐ অটো ওয়ালার সাথেই দেখা। ওনার অটোতেই রওনা দিলাম। সাথে আরো তিন জন যাত্রীও ছিল। ওরা পথে নামে গেল আমার অফিসের কয়েক গজ সামনেই অটোস্টান্ড। অটোতে নামেই কিছুদূর হেটে যেতে হয়। উনি আর অটো স্ট্যান্ড এ না দাড়ায়ে সোজা আমার অফিসের নামায় দিলেন। ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আজকে এতো দূর চলে আসলেন যে। জবাবে বললো আপনাকে নামানোর জন্যই আসলাম। ভালো লাগলো তাই আজকে একটু বেশি ভাড়া দিতে চাইলে উনি আর নিল না। বললো ভাইজান লাগবে না। আমি নিজেই তো নিয়ে আসলাম।

আসলে এই ধরণের মানুষেরা শুধু ভালোবাসা চায়। আপনি তাদের ভালোবাসা দিলে তারা উজার করে আপনাকে ভালোবাসবে। এই ভালোবাসার জন্য কোন স্কুল কলেজ ভার্সটিতে তাদেথ পড়তে হয় নিই।

images (7).jpeg
Source



0
0
0.000
3 comments
avatar

ঠিক বলছেন ভাই, এসব শ্রমজীবী মানুষদের সাথে হাসি মুখে কথা বললে, ভালো ব্যবহার করলে তারা তারা খুবই খুশি হয়।

0
0
0.000
avatar

আসলেই তারা খুব খুশি হয়। আর তারা সাধ্যমত চেষ্টা করে আপনাকে খুশি করার। আমি এই শ্রেনীর লোকদের সাথে সুযোগ পেলেই কথা বলি। তাদের ভালো মন্দ বোঝার চেষ্টা করি।

0
0
0.000