এই কান্নার মত সুন্দর কান্না আর নেই

avatar

রহিম সাহেব রানীর বন্দর বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করে। ক্ষুদ্র আকারের ব্যবস্যায়ী। একটি ছেলে সন্তান ক্লাস নাইনে পরে। পরিবার চলে যায়।

গতবার করোনার কারনে লক ডাউনে ঈদ আর বৈশাখীতে ব্যবসা হয় নিই। কিন্তু পরিবারের খরচ আর মাল্টিপারপাস ঋনের কিস্তি থেমে থাকে নিই। লক ডাউনের পর নিজেকে ধীরে ধীরে গোছাতে চেষ্টা করেছেন রহিম মিয়া। লক ডাউনের পরবর্তীতে দোকানে কেনা বেচাও তেমনটা হচ্ছিল না। মানুষের কাছে টাকা নাই কিনবে কি করে।

পাশের গ্রামের দুলাল সুদারু টাকার ব্যবসা করে। মানে লাভের উপর টাকা দেয়। নূন্যতম ১০% সুদে টাকা ধার দেয়। রহিম মিয়া নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য দুলাল মিয়ার দারস্ত হয়। এক লক্ষ টাকা ১০% হারে সুদের উপর ধার নেয়। কিন্তু উপায়হীন ডুবন্ত মানুষ খরকুটা ধরেও বাঁচতে চায়। কিন্তু রহিম মিয়া চোরাবালিতে ঢুকে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছে। ততক্ষণে উপায় আর খুঁজে পায় না। সুদের টাকা দিতেই নাস্তানাবুদ অবস্থা। সুদের টাকা ঠিক ভাবে দিতে না পেরে কয়েকবার দুলাল বাবুর লোকের হাতে মাইর ও খায়। ব্যবস্যাও প্রায় শেষ। উপায়ান্তর না পেয়ে শহর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পাশের শহরে গিয়ে রিক্সা চালানো শুরু করে রহিম। তাতে তো সংসারের চলে না ঠিক ভাবে ওর উপর সুদ সহ টাকা শোধ করা অসম্ভব। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া ছেলেটাও অটোরিক্সা নিয়ে বার হয় দুইদিন। তাতেই ছেলের জ্বর চলে আসে। একে তো এক মাত্র কশিজার টুকরা ছেলে উন্নত জীবন দেওয়ার কথা ছিল। কখনো কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেয় নিই সেই ছেলেকে এখন অটোরিকশা চালাতে লাগিয়ে দিয়েছে যা কখনো কল্পনাও করে নিই। সেই ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে উন্নত নূন্যতম প্যরাসিটামল খাওয়ানোর ও টাকা নেই তার কাছে। এইসব ভাবতে ভাবতে রিক্সা চালাচ্ছিলেন রহিম মিয়া। এইসব দুঃশ্চিন্তায় বার বার ভূল পথের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্যাসেঞ্জার ২৮/৩০ বছর বয়সের এক যুবক হবে। গন্তব্যে স্থলে নামিয়ে ভাড়া দেওয়ার সময় ছেলেটির কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দেখতে পেয়ে একটু সুরটাকে সরু করে আকুতির স্বরে দশ টাকা বেশি চাইলেন। ছেলের জন্য ওষুধ নিবে বলতে বলতে চোখের পানি আর থামাতে পারলেন না রহিম মিয়া। অঝোরে কেঁদে ফেললেন।

ছেলেটির একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। এই ধরনের অসহায় মানুষদের নিয়েই কাজ করে। সবকিছু শুনে সে পকেট থেকে পাঁচ শত টাকার একটা নোট বার করে দিয়ে তার প্রয়োজনেটাতে বললেন।সাথে তোর সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নম্বারটাও নিলেন।

ছেলেটির নাম বিপ্লব। অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল তার সংগঠন থেকে তাকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু সুদের টাকা আবার ঋন আবার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করা আবার বাড়ি ভাড়ার বকেয়া টাকা। এতো কিছু কিভাবে সে করবে। বিপ্লব প্রথমেই তার কিছু ধনী বন্ধুদের কাছ থেকে সব কিছু বলে জাকাতের টাকা সংগ্রহ করলো। এর আগেও পে এই ধরনের কাজ করেছে। তারপর রহিম।সাহেবের এলাকায় তার এক প্রভাবশালী বন্ধু রয়েছে। তার বাবা সেই এলাকার রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব। তার বাবার কাছে একটু সাহায্য চাইলেন সুদারু দুলাল মিয়ার সাথে একটু সমাধান টানার। তিনিও রাজি হয়ে একটা তারিখ ঠিক করে বসলেন।

বিপ্লবের প্রস্তাব ছিল তার ঋনের টাকাটা তার সংগঠন থেকে শোধ করে দেবে। শুধু সুদের টাকাটা যেন মাফ করে দেয়। এই প্রস্তাব তার বন্ধুর বাবা দুলাল মিয়াকে দিতেই দুলাল রাজি হয় না। শেষে একটু রেগে গিয়েই বন্ধুর বাবা বললেন এই লোক গুলো এতো দূর থেকে আসে তোমাদের এন শুধু করে দিচ্ছে আর তুমি সুদের টাকাটা মাফ করতে পারবে না। এক তো সুদ খাচ্ছো ইসলামে এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জানো সুদ খাওয়া আর অঁইছিল মায়ের সাথে জেনা করা এক কথা।

এইসব শুনতেই দুলাল মুখটা অন্ধকার করে বলেছেন ঠিক আছে। আগে জানলে আসতামেই না। তার টাকাটা শোধ করে দেওয়া হল। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আবার চুশো করে দেওয়ার ব্যাবস্থা হল। এবার বাসা বাড়ির বকেয়া ভাড়াও প্রায় বিশ হাজারের মত। বাড়িওয়ালা নিজে যেচে আসে বললেন ওনাকে বকেয়া ভাড়া আমাকে দিতে হবে না। বরং উনি বিপদ থেকে আগে উদ্ধার হোক।

বন্ধুর বাবা বিপ্লবকে বললো বাবা তাহলে সমাধান হয়ে গেলো আমি চলে তাহলে। বিপ্লব বললো অঙ্কের আরেকটা ছোট কাছ বাকি আছে। কালামের স্কুলের পড়াশোনাটা চালু করে দেওয়ার দরকার। আর দুই মাসের তাদের পরিবার চালানোর জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা দরকার। না হলে তো ফির ব্যবসার টাকা এদিক খরচ করে ফেলবে।

বন্ধুর বাবা কিছুক্ষন অপেক্ষা করে বললো ঠিক আছে ঐসব নিয়ে আর তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার গ্রামের যেহেতু আমি তাদের দুই মাসের খরচের টাকা আর তার পড়াশুনা শুরু করার জন্য যা যা লাগবে আমি। সেটার দাড়িত্ব নিলাম। আর উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটা সেলাই মেশিনের ও ব্যবস্থা করে দিবে রহিমের স্ত্রীর জন্য সেটার ও আস্বাস দিলেপ বন্ধুর বাবা।

তারা সকলেই নিশ্চুপ নীরবতা পালন করছে। বোবাদের মত চুপ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে অশ্রু গরাচ্ছে। আমরা বেশিক্ষন আর সেখানে থাকি নিই। তাদের বাড়িওয়ালা খুব খুশি হয়েছে তাদের বিপদমুক্ত হতে দেখে।

আজকে তারা নিশ্চিন্তে ঘুমাক। যদি ঘুমানোর আগে কান্না পায় তাহলে পাক। এই কান্নার মত সুন্দর কান্না আর কি হতে পারে। গভীর বিপদের মুখ থেকে ফিরে আসা কান্নার মত সুন্দর কান্না আর নেই।

images (7).jpeg
Source



0
0
0.000
1 comments
avatar

Congratulations @steemitwork! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You distributed more than 900 upvotes.
Your next target is to reach 1000 upvotes.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Check out the last post from @hivebuzz:

False-Positive phishing alert reported by antivirus software
Feedback from the May 1st Hive Power Up Day
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
0
0
0.000