কলিমুদ্দির অন্তিম যাত্রা
কলিমুদ্দির চার সদস্যের সংসারে একাই কর্মক্ষম ব্যাক্তি। গার্মেনটস এ চাকুরি করে যা মাইনে পায় তা দিয়েই টেনে হিচড়ে সংসার চালায়। মাইনে পাওয়ার আগেই খরচ হয়ে যায়। রহিম চাচার মুদি দোকানে লম্বা বাকির খাতা। সেই দশ বছর ধরেই এই খাতা চলমান। আজকাল খাতাটার ওজন বাড়ছে। জিনিস পত্রের দাম হু হু করে বারছে তাতে খাতার ওজন কেমনে কমবে।
কলিমুদ্দির দুই দিন ধরে হালকা জ্বর, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হালকা ব্যথাও। এভাবেই অফিস করছে না করেও বা উপায় কি? দিনকাল যা দেখা যাইতেছে তাতে এই জ্বর ভালো লক্ষন না হলে উঠলো কলিমুদ্দির স্ত্রী শেফালী। কলিমুদ্দি মাথা নিচু করে শুকনা ভাত আলু ভর্তা আর বিদেশী মুরগীর ডিম ভাজি দিয়ে ইচ্ছা না থাকা সত্তেও গিলেই যাচ্ছে। কারণ সে জানে না খাইলে শরীর দুর্বল হলে অফিস করতে পারবে না। অফিস না করলে চাকরী যাবে। এমনিতেই অনেকজনকেই ছাঁটাই করেছে। আরো নাকি ছাঁটাই করবে।
শেফালী বিছানা ঠিক করে মসারী লাগাই দিল। এদিক আবার মশার উৎপাতে মসারী না লাগাইলে শরীরে যতটুকু রক্ত অবশিষ্ট আছে সবগুলোই শুষে নিবে মশা। আর মশার পো পো গান এমনিতে বিরক্তিকর। সকালে ঘুম থেকেই উঠেই আবার অফিসে যাইতে হবে।
চাল, ডাল কিচ্ছু নাই যা আছে আধ বেলা চলে। শেফালী বলতে না চাইলেই বাধ্য হয়ে বলতে হইলো কলিমুদ্দিকে। কলিমুদ্দি বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পরলেন রহিম চাচার মুদির দোকানে। দোকানের সামনে দাঁড়াতেই রহিম চাচার হাসি মাখা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। কাঁচুমাচু শব্দে চাচা পাঁচ কেজি চাল দেন বলতেই রহিম চাচা বলে উঠলো কলিমুদ্দি অনেক টাকা বকেয়া পরে গেছে। আমাদের দিকেও একটু তাকাও। কলিমুদ্দি স্বর নিচু করে চাচা আর কয়টা দিন বেতন হইলেই আপনারে আগে বলতেই কলিমুদ্দির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এক সময় মাত্রাটা বেড়ে গেলে দোকানেই ঢলে পরে হাসপাশ করতে করতে। সাথে সাথে দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা রফিক মিয়ার ছেলেটা অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শেফালীর সিম্ফনি বাটন ওয়ালা ফোনে খবর আসছে কলিমুদ্দি চাচা অসুস্থ মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুনতেই হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে শেফালী দৌড় দেয়।
কলিমুদ্দির শ্বাস নিতে পারছে না। শুকনো কাশিতে বুক হতে ঠাস ঠাস শব্দ হচ্ছে। শেফালী ইতিমধ্যেই জান প্রাণ ছাড়ে দৌড় দিয়ে কলিমুদ্দির কাছে উপস্থিত। অবস্থা খুবই খারাপ শেফালী পাখা দিয়ে বাতাশ করে যাচ্ছে। মেডিকেলে তিল ধরনের জায়গা নেই ইসরাইল হয়তো কলিমুদ্দির কাছে এসেই থেমে গেছে।
শেফালীর হাত শক্ত করে ধরে কিছু কথা বলতে চাচ্ছে কলিমুদ্দি। কলিমুদ্দির প্রাণ পাখি তাকে ছেড়ে বিদায় নিচ্ছে তা সে বুঝতে পেরেছে। অনেক কষ্ট করেই কলিমুদ্দি শেফিলীকে বললো,
উত্তর পাড়ার জমিটা কখনো বেচবা না। যতোই বিপদে পর। আচ্ছা, আরো কিছু বলতে চাচ্ছেন বলেন।
ছেলে মেয়ের লেখা পড়া শত কষ্ট করে হলেও চালায় নিবা হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে থাকে।
ডি পড়ালেখা বন্ধ হবে না। তারপর, তারপর বলেন । কি খুব কষ্ট হচ্ছে নাকি?
মেয়েটার ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবা। আর জমি জায়গা ছেলে মেয়েদের নামে লিখে দিবা না। না হলে জলে ভাষায় দিবে তোমাকে।
ছেলে মেয়ের পড় লেখায় যেন কমতি না হয়। আর তোমার কবরটা আমার পাশেই দিবা।
আর শুনো বলতে বলতে কাশির শব্দে কম্পন শুরু হয়ে গেছে। নার্সরা দৌড়ে আসে ট্রলি তে তুলে নিয়ে দ্রুত গতিতে চলতে থাকলো। ডাক্তার ও দ্রুত এগিয়ে আসে সবাইকে বার করে দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেন।
কলিমুদ্দির ছেলে মেডিকেলে আসে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করে মা, বাবা কই? ছেলের শব্দ শুনতেই শেফালীর খুব ইচ্ছা করছে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে গলা ছেড়ে কাঁদতে। আকাশ বাতাশ ছিড়ে কাদতে। একদিকে সন্তানের আহাজারী অন্যদিকে স্বামী মৃত্যুশয্যায়।
Hi @steemitwork, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON