সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা
লম্বা একটা বিরতির পর বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা নিয়ে হাজির হলাম। কয়েক বছর পর কারখানায় আবার ঢুকলাম। কারখানার ভিতরের পরিবেশটা সত্যিই খুব সুন্দর। বড় বড় গাছ পালায় ছায়া মনোরম পরিবেশ। তবে ভিতরের বর্তমান কাঠামো আর অবহেলিত পরে থাকা মেশিন যন্ত্রাংশ গুলো দেখলে আফসোস হয়।
ভৌগলিকভাবে আমাদের সৈয়দপুর গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ব্রিটিশ আমলে তারা সৈয়দপুরকে সিটি শহর হিসেবে ঘোষনা দিয়েছিল। সিটি শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের প্রাচীন শহরের মধ্যে সৈয়দপুর একটি। ব্যবস্যা বাণিজ্যের জন্য সৈয়দপুর প্রসিদ্ধ হলেও এটি 'রেলের শহর' হিসেবেই খ্যাত। সেই সময়ে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেলওয়ে। তারই প্রয়োজনে গড়ে উঠে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। ১৮৭০ সালে ১'শ ১০ একর জমির উপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেলওয়ে কারখানাটি। পুরো শহর জুরে আটশো একর জমি রয়েছে। রেলওয়ে শ্রমিকদের জন্য রয়েছে ২০৫০ টি কোয়াটার। পুরো শহর জুড়ে ব্রিটিশ আমলেই নির্মিত হয়েছে অনেক গুলো বড় বড় বাংলো।
দেশে যেখানে লক্ষ লক্ষ বেকার সেখানে সৈয়দপুরে কারখানায় জনবলের অভাবে অকেজো হয়ে পরে আছে শত শত মেশিন। মেশিন গুলো শ্রমিকের কোলাহল শুনার জন্য অধীর আগ্রহে নিয়ে অপেক্ষা করছে।
৩,১০০ জন শ্রমিকের পরিবর্তে বর্তমানে কাজ করছে ১২৪৩ জন। এই কারখানায় রেলের ২০০০ যন্ত্রাংশ তৈরী করা গেলেও এখন মাত্র ২০০ টি যন্ত্রাংশ তৈরী করা হয়। ১৯৯১ থেকে ১৯৯২ সালে ৫০০ জন দক্ষ মিস্ত্রি গোল্ডেন হ্যান্ড শেকের মাধ্যামে বিদায় নেওয়ায় অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দক্ষ জনবলের অভাবে অনেক মেশিন অকেজো হয়ে পরেছে।
কারখানার ভিতরে এখনো রয়েছে তিনটি স্টিম ইঞ্জিন। তার মধ্যে একটি ব্রডগেজ, একটি মিটার গেজ ও একটি ন্যারোগেজ। ন্যারোগেজ স্টিম ইঞ্জিনটি চলে সর্বশেষ ১৯৭২ সালে বাগেরহাট রুপসা সেকশনে। এই ইঞ্জিন গুলো ছিল ১৯০১ সালে ইংল্যান্ডের ভলকান কোম্পানির তৈরী। কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো তারা রয়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়।
নিচের যে ছবিটি সেটা হচ্ছে ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট সেলুন। এর লোগোতে লেখা রয়েছে সেলুনটি ১৯২৭ সালে ব্রিটেনের একটি কারখানায় তৈরি। মূলত ব্রিটেনের রানি ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের জন্য সেলুনটি এখানে বয়ে আনেন। ওই ক্যারেজে ব্রিটেনের রানিসহ পদস্থ কর্মকর্তারা ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করেছেন বলে কিংবদন্তি আছে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ২৮ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়েকে (পিইআর) ওই সেলুনটি উপহার হিসেবে দিয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার। এর নম্বর ১২৬৫।
১৯৮১ সালে তা অকেজো হয়ে পড়লে সৈয়দপুর কারখানায় নিয়ে আসা হয়। সেলুনটির উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তা সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। এর অভ্যন্তরে রয়েছে প্রেসিডেন্টের শয়নকক্ষ, তাঁর স্টাফদের জন্য পৃথক দুটি কক্ষ, রান্নাঘর ও কর্মচারীদের জন্য পৃথক একটি কক্ষ। আরও আছে বিলাসবহুল বাথরুম। এতে আছে হাই কমোড, বেসিন, বাথটাব ও শাওয়ার। এ ছাড়া আছে সভা করার জন্য একটি কনফারেন্স রুম। সাধারণ কোচে আটটি চাকা থাকলেও সেলুনটিতে রয়েছে ১২টি চাকা। এর আসবাব বৈদ্যুতিক ফিটিংস সবই আধুনিক এবং এখনো কার্যকর।
ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। ছবিটি প্রথম আলো দৈনিক জাতীয় প্রত্রিকা হতে নেওয়া।
সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় মোট ২৬ টি সপ রয়েছে। সব গুলোতেই অসংখ্য মেশিন থাকলেও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে অলস পরে রয়েছে। অনেক মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে অনেক মেশিন নষ্টের পথে।
ইনশাআল্লাহ্ পরবর্তী ব্লগে শপ গুলো নিয়ে লেখার চেষ্টা করবো।
Congratulations @steemitwork! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP