শৈশব থেকে এখন

avatar

শৈশবটা কেমনে গেলো বুঝতেই পারলাম না।নিম গাছের মত তর তর করে বেরে উঠলাম। শৈশবের ইতিহাসটি নিপুন হাতে তৈরী করেছিল সৃষ্টিকর্তা নিজেই। তাই তো এই শৈশবে কোন ভেজাল নেই। শৈশবের সেই দুরন্তপনা, দুষ্টামি আর দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি ছিল জীবনের এক অন্য রকম মুহুর্ত। সেই দুরন্তপনা মনের অন্তরালে গেঁথে আছে আর চোখের কোনে ভেসে আছে।

সেই সময়ের স্বপ্ন গুলোও কেমন অদ্ভুদ ছিল। কখনো গুন্ডা মাস্তান হতে চাওয়ার স্বপ্ন আবার কখনো পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কখনো আবার ডাক্তার আবার কখনো ইঞ্জিনিয়ার। এই স্বপ্ন গুলো আবার তাৎক্ষনিক পুরোন ও করে ফেলতাম। ঈদ পূজা মহরম সহ বিভিন্ন উৎসব ও মেলায় খেলনা পিস্তল বন্ধুক তো কিনতেই হবে। না হলে ভাত খাওয়া বন্ধ। বন্ধুক না হলে চোর পুলিশ গুন্ডা মাস্তান হওয়ার স্বপ্ন কিভাবে পূরন হবে। মেলায় গিয়ে নজর আটকে থাকতো খেলনা দোকানে ঝুলে থাকা সেই বন্ধুক পিস্তল গুলোর দিকে। এই বন্ধুক হাতে পেলেই টানা সপ্তাহ খানেক চলতো মাফিয়া গিরি। বাড়ির আনাচে কানাচে লুকিয়ে বাংলা সিনেমার মত ঢিচিউ ঢিচিউ করে মুখ দিয়ে গুলির শব্দ। আবার অনেক পিস্তলে গোল গোল পুথির গুলিও ছিল। নিজেরা নিজেরা পাটি ভাগ করে গ্রুপ বানাতাম। পাটি ভাগের ও ছিল বিভিন্ন পদ্ধতি । তখন খেলাধুলার ও অভাব ছিল না। লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, বরফপানি, তালাচাবি, বুড়ি কিতকিত, কুতকুত, দাড়িয়াকোট, বোমবাস্টিং, লাটিম ঘুরানো, মার্বেল খেলা থেকে শুরু করে আরো কত খেলা ছিল।

একবার তো লুকাচুরিতে পুলিস হয়েছিলাম। চোর গুলোকে খুঁজে না বার করে আমি বাসায় এসে ইচ্ছা মত খেয়ে দেয়ে টিভিতে কার্টুন দেখছিলাম। পরে তারা উল্টো আমাকে খুঁজতে বার হয়। অবশেষে খেলা ভন্ডুল হয়ে যায়। পরের দিন আর আমার খেলা নিবে না সবাই মহাজোট বেধেছিল। আমিও হুমকি দিয়ে বলেছিলাম আমার খেলা না নিলে আমি সব বলে দিব কে কোথায় লুকিয়েছে। পরে অনেক কাহিনি করে আমার খেলা নিতে বাধ্য হয়েছিল।

এভাবেই শৈশব কাটিয়ে এখন তো চুলে পাক ধরা অবস্থা। বিয়ে সাদীর বালাইটা এখনো বাকি আছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫/৬ জনের মুখে শুনতে হয় বিয়ে কবে করবেন, বিয়ে কবে করছেন, বিয়ে কবে করবি। ভাই দাওয়াতটা যেন মিস না হয়। এমনে প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার মত বিরম্বনা আর দেখি নিই। এদিক আমার পাতলুন ঢিলা হয়ে যাইতেছে আর ওরা দাঁত মুখ চখে আছে দাওয়াত খাইতে। খুব আসছে দাওয়াত খাইতে, দাওয়াত খাওয়াবোনি।

ইদানিং বাড়ির পিচ্চিটার যে কি হল চাচীকে দেখবে বলে বলে মাঝে মধ্যেই যেদ ধরে নিয়েছে। বেটায় নাছরবান্দা। মনে হয় ওর আম্মায় শিখায় দিছে। দেবরের সুখ হয়তো সহ্য হচ্ছে না তার। ওকে এখন এড়ায় চলতে হয়। এদিক মা ওর সাথ তাল মিলিয়ে বলা শুরু করেছে কবে বিয়ে করবি? বেশি কথা না বলে হালকা হেসে সাটকি কাটায় শ্রেয়।

অত্যাচার, চারিদিকে অত্যাচার। পুরুষ সমাজের উপর অত্যাচার করতে এরা সদা সর্বত্র প্রস্তুত।

20201005_221852.jpg



0
0
0.000
3 comments
avatar

চোর গুলোকে খুঁজে না বার করে আমি বাসায় এসে ইচ্ছা মত খেয়ে দেয়ে টিভিতে কার্টুন দেখছিলাম।

এরকম আমিও একবার করেছিলাম।ছোটবেলার সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলো ভাই। ভালো লিখেছেন।

যাইহোক বিয়ে করেন না কেনো? হাহাহা। এত করে যখন সবাই বলতেছে করেই ফেলেন। বিয়ের লাড্ডু খাইয়াই দেখেন।

0
0
0.000
avatar

হা হা হা আসলে ঐ দিন গুলো ভালোই ছিল।

লাড্ডু খাইতে হবে ভাই। না খাইলে হবে না খাওয়ার পর কি হবে দেখা যাবে।

0
0
0.000