একটি প্রেমের অন্তিম যাত্রা

avatar

বৃহঃস্পতিবার রাত হয়েছে ডিনার শেষে রুমে এসে ছটফট করছে বাবু। সূবর্না একটু আসতে দেরি করছে। ঐদিক সব কিছু গুছায়ে আসতে একটু তো সময় লাগবেই। এতোটুকু দেরিই সইছে না বাবুর। সুবর্নাকে একটু না জড়িয়ে ঘুমালে তার ঘুম আসে না। বৃহঃস্পতিবার রাতটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বাবু। মনে মনে রেগে যাচ্ছে বাবু তার আসায় দেরি হওয়াতে। সব কাজ সেড়ে রুমে ঢুকেই দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিল। বাবুও অভিমানি ভাব নিয়ে উল্টো দিকে তাকিয়ে আছে।

সুবর্ণা বুঝতে পেরেছে সে অভিামন করেছে। কারণ তাকে ইশারা করেছিল দ্রুত আশার জন্য। অবশ্য সে জানে তার রাগ আর অভিমান কিভাবে ভাঙ্গাতে হয়। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ক্ষমাকর স্বোয়ামী । অনেক রাত হয়েছে চল শুয়ে পরি।

আহা! এতো যখন দরদ তাহলে দেরি করলে কেন? মাফ তো চেয়ে নিলাম। তোমাদের একটা ভালো সুবিধা আছে যত অপরাধেই কর না কেন, ক্ষমা চাইলেই যেন সাত খুন মাফ। তবে আজ আর ক্ষমা নেই। আজ তো শাস্তি পেতেই হবে। বলেই দুত হাত ধরে বিছানায় বসালেন।

যো, হুকুম যাহাপনা। আপনার শাস্তি আমি মাথা পেতে নিতে রাজি। আপনার শাস্তি যে আমাকে কি পরিমান শান্তি দেয় তা যদি জানতে বলেই .... লজ্জায় বুকে মুখ লুকালেন। শার্টের বুক বোতাম গুলো একে একে ছিড়ে ঠোটের স্পর্শে বুকে ঝড় বইয়ে দিতেই ওহে দুষ্টু মেয়ে দেখাচ্ছি মজা বলেই সমান তালে পাল্লা দিয়ে একে এক সব খুলে ফেললো বাবু।

এভাবেই সুখে শান্তিতে দিন রাত কাটছিল তার। হঠাৎ করেই করোনা মহামারীর ভয়াল থাবা তাদের আঘাত করে ফেললো। দুজনেই করোনা পজেটিভ। নিমিষেই যেন সব কিছু তাদের কাছে অন্ধকার হয়ে গেল সব কিছু। দুজনেই হোম কোয়ারন্টাইনে রয়েছে। ডাক্তারদের শত বাধা নিষেধ ও পরার্মশ দেওয়ার পরও তাদের কে আলাদা কোয়ারেন্টাইন করতে পারে নিই কেউ। তারা দুজন দুজনে এক সাথে এক ছাদের নিচে থেকেই মরতে চায়। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চায় হাতে হাত রেখে।

জীবনের শেষ সময়টুকুও তারা তাদের অতীততের সুখ গুলো সাথে নিয়ে যেতে চায়।

বাবু, তোমার কি মনে আছে বাংলা সিনেমার মত তোমার সাথে যখন কলেজে ধাক্কা খেয়ে আমার সব বই গুলো পরে গিয়েছিল?

হুম, তুমি আমার দীর্ঘ বলিষ্ঠ স্বাস্থ্য এবং পৌরষদীপ্ত চেহারা দিকে লজ্জামিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব কিছু ভুলে কেমন যেন হেবলী হয়ে ছিলে।

ইহ! কত বড় মিথ্যাবাদী, তুমি এখনো মিথ্যে কথা ছাড়লে না। আমি ছিলাম ঝঁসীর মহারাজা গঙ্গাধর রাওয়ের ঝাঁসী কি রানি। আমি আর ভয়, হুহ । বরং তুমিই ঝাঁসীর রানী লক্ষ্মী বাঈ এর সাথে ধাক্কা খেয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলেছিলে দুঃখিত ভুল করে লেগেছে ধাক্কা বলেই সব গুলো বই তারাহুরা করেই তুলে দিয়েছিলে। হা হা হা!

সুবর্না, তোমাকে এভাবে হাসতে দেখ খুব ভালো লাগছে। আমি হয়তো আর বাচবো না। আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধর। আমার অক্সিজেন নিতে একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে বলেই হাপাতে থাকলেই খুব ঘন ঘন। সূবর্না হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তার নার্স পাবে না জেনেও চিৎকারে কোয়ারেন্টাইন ভারী করে ফেললো।

images (4).jpeg

Source



0
0
0.000
0 comments