”The Seller of Colorful Memory of Our Childhood” || ”আমাদের রঙ্গীন শৈশবের স্মৃতির বিক্রেতা”

avatar
(Edited)

বাংলা একটা প্রবাদ আছে, শখের দাম লাখ টাকা। যদিও প্রবাদটা বাঙ্গালীদের দখলে,কিন্তু এই প্রবাদের সাথে বাঙ্গালীর বাস্তবতার ঠিক লাখ যোজন দুরের সম্পর্ক। আমাদের মুষ্ঠিমেয় বাঙ্গালীদের বাস্তবতাটা এতোটাই কঠিন যে, আমাদের স্বাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না। তাই আমরা বাঙ্গালীদের জন্য প্রবাদ বাক্যটা ঠিক এমন হওয়া উচিত ছিল, “শখের দাম শত টাকা”। তারপরেও একটা কিন্তু থেকে যায়, কয়েক কোটি বাঙ্গালীর জন্য, তাদের জন্য মনে হয় যদি প্রবাদ বাক্যটা এমন হতো “ শখের দাম মাত্র পাঁচ টাকা”। তাহলে হয়তোবা প্রবাদবাক্যটি যথাপুযুক্ত হতো।


9.jpg

আমাদের দেশের মুষ্ঠিমেয় বাঙ্গালীর বাস্তবতাটা এতোটাই কঠিন যে,আমাদের সামান্য শখের মূল্য যদি মাত্র পাঁচ টাকাও হয় সেই শখটাও আমাদের কাছে কখনো কখনো কল্পনার মতো মনে হয়। কারন সেই পাঁচটা টাকা দিয়ে হয়তো কোন কোন পিতা তাদের সন্তানদের জন্য লজেন্স কিনে নিয়ে যেতে পারবে, এবং এটাই তার কাছে পরম আনন্দের তার পাঁচ টাকার শখের তুলনায়। আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছেন যারা নিজের পরিবারের সদস্যদের মূখে দু-বেলা দু-মুঠো অন্ন তুলে দেবার জন্য ফুটপাতে সামন্য কিছু অর্থের বিনিময়ে সামাজের ধনী শ্রেনীর মানুষগুলোর জন্য কিছু সস্তা মূল্যের শখের সামগ্রী বিক্রয় করেন। কারণ আমাদের সমাজের ধনী ব্যক্তিদের কাছে প্রকৃতপক্ষেই ”শখের দাম লাখ টাকা”।


6.jpg

আমি আমার গল্পের নামকরন আমাদের রঙ্গীন শৈশবের স্মৃতির বিক্রেতা রেখেছি তার কারনটা কি জানেন, আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যাদেরকে আমি যদি মহান বলে সম্মান না করি আমার অন্যায় হয়ে যাবে। এই সব ব্যক্তি কেনইবা আমাদের কিছু খুবই শখের জিনিস বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করেন। তারা তো পারতো বড় বড় শহরের ফুটপাতে ধনী ব্যক্তিদের জন্য না হোক, মধ্যবিত্ত্ব এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অতীব প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় করে, তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে। হ্যাঁ, তারা পারতেন কিন্তু তারা কেনইবা আমাদের কিছু শখের জিনিস বিক্রি করার চেষ্টা করেন? এই প্রশ্ন কি আপনার মাথায় কখনো উঁকি দিয়েছিলো? আগামীকাল ঠিক দুপুর বেলা আমার মাথায় এই প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিলো, যখন আমি ঢাকার উত্তরা সিটির ৩ নং সেক্টরের কাবাব ফ্যাক্টরীর মোড়ে আমার সহকর্মীদের সাথে মধ্যান্যভোজের জন্য গিয়েছিলাম একটা ব্যয়বহূল রেস্তোরায়, যার নাম ছিল মেজবানী খানা। আমি যখন উক্ত রেস্তোরায় দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম রেস্তোরার কাচের জ্বানালা দিয়ে আমি প্রথম ছবিব ব্যক্তিটিকে দেখতে পাই। এবং আমার মনের ভিতর আজানা এক আগ্রহের জন্ম নেয় ঠিক মহূর্তে।


11.jpg
10.jpg

আমি ভোজন শেষে উক্ত ব্যক্তির নিকটে যাই এবং উনার একটা ছবি তোলার অনুমতি নেই। তিনি হাসি মুখে আমাকে অনুমতি প্রদান করেন এবং বলেন মামা ছবি তোলা মনে হয় আপনার শখ,আমার যখন কিশোর বয়স ছিল তখন মামা ঘুড়ি উড়ানো আমার খুব বড় একটা শখ ছিল। ছোট বেলা থেকেই আমি খুব ভালো ঘুড়ি বানাতে পারতাম এবং সেই টাইমে আমি ঘুড়ি বানাই বিক্রিও করতাম, গ্রামের অনেক মানুষ আমার থেকে অর্ডার দিয়ে ঘুড়ি বানাই নিতো। আগে আমরা রঙ্গীন কাগজ, পলিথিন আর বাশের চেলা দিয়া ঘুড়ি বানাইতাম। আর এখন কতো আধুনিক হয়া গেছে মামা দেখছেন। আর আধুনিক না করি উপায় নাই মামা, নাইলে মানুষ ঘুড়ি কিনার নায়। লোকটা এক নিশ্বাসে কথাগুলো বললো আমাকে, আমি মাত্র একটা ছবি তুলেই থেমে গিয়েছিলাম ওনার কথা শুনে। তাই ওনার আর ছবি তোলা হয় নাই। ওনার থেকে আমি আমার লেখার জন্য সঠিক গল্পটা পেয়ে গিয়েছিলাম।


4.jpg
5.jpg

জিঞ্জাস করেছিলাম মামা এতো কিছু ছেড়ে ঘুড়ি কেন বিক্রি করতেছেন। জবাবে, এগাল হেসে উত্তর করেছিলো মামা মানুষের যখন কোন কাম থাকে না তখন মানুষ তার শখের জিনিসগুলা করার চেষ্টা করে বেশি বেশি, এখন দেশের মধ্যে করোনার সময় চলতেছে, মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বাইর হবার চায় না,আর উত্তরার বড় লোক মানুষগুলা ঘুড়ি কিনা নিয়া গিয়া বাসার ছাদে উড়ায়। আর মামা ঘুড়ি এমন একটা শখের জিনিস কোন মানুষ ‍যদি দেখে আরেকজন ছাদের উপর ঘুড়ি উড়ায়, তারও মনে খুব ইচ্ছা জাইগবো ঘুড়ি উড়ার, আর শহরের মানুষ কি ঘুড়ি বানার পাইবে। তাই চিন্তা কইরলাম এখন তেমন কাজ ও খুজি পাওয়া যায় না, বউ বাচ্চা নিয়া চইতে খুব কষ্ট হয়, তাই আমার আর আমার বউয়ের বিয়ের আংটি বিক্রি করি কিছু টাকা জোগাড় করি কয়েক জনের দেখি আধুনিক ঘুড়ি গুলো বানাইছি। দিনে তিন চাইরটা বেইচলে খরচের টাকা উটি যায় এবং কিছু লাভ থাকে, ওই লাভের ট্যাকা দিয়া সংসার চালাই মামা।


7.jpg
8.jpg

ঢাকা শহরত নিজে তো ঘুড়ি উড়ার পাই না মামা, বস্তিত থাকি। বস্তিত ঘুড়ি উড়ার জায়গা নাই। যখন বিকাল বেলা ঢাকার আকাশোত অনেক গুলো ঘুড়ি উড়তে দেখি তখন আমার খুব ভালো লাগে মামা এটা ভাবি যে এতোগুলা ঘুড়ির মাঝত আমার তৈরী ঘুড়িও আছে এবং সেই ঘুড়ি কোন কোন মানুষকে আনন্দ দিতেছে। তখন মনে মনে খুব খুশি নাগে মামা।

আমি লোকটার সাধু চলিত ভাষার মিশ্রনের সুন্দর এবং জীবন্ত একটা গল্পের উপস্থাপনা শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মানুষটা হঠাৎ করে আমাকে জিঞ্জাস করে বসে মামার গ্রামের বাড়ী কই। আমি একবাক্যে জবাব দিয়েছিলাম ”গাইবান্ধা”, তারপর লোকটা বলল মামা ছোট বেলায়তো অনেক ঘুড়ি উড়াইছেন একটা ঘুড়ি নিয়া যান, শুক্রবারের বাড়ির ছাদে উড়াইয়েন খুব মজা পাইবেন। আমি আর ওনাকে না বলতে পারলাম না, তাই জিঞ্জাস করলাম ঘুড়ি আর নাটাই কতো দিতে হবে আপনাকে। লোকটা আবার হাসি দিয়ে বলল মামা আপনাক আমার খুব লাভো লাগছে,যা আপনাকে আমার লাভের টাকা দেওয়া লাগবে না আপনি সব মিলাই আমাকে সাড়ে তিনশ ট্যাকা দেন, তাতেই হবে। লোকটা আমি একটা ৫০০ শত টাকার নোট বের করে দিয়ে বললাম মামা আপনি এটা পুরোটাই রাখেন, আপনার লাভসহ, আর আমাকে সত্যিই যদি আপনার খুব ভালো লাগে তাহলে এটা রাখলে খুব খুশি হবো। লোকটা শেষ অবধি আমার প্রশংসা করতে ভুললেন না, বললেন মামা আপনার ব্যবহারের মতোই আপনার মন। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক।


3.jpg
1.jpg

ঘুড়ি এবং নাটাই হাতে নিয়ে যখন দেখলাম আরো অনেকেই ঘুড়ি বিক্রি করছেন সেই মোড়ে কিন্তু তাদের কারো মাঝে আমি প্রথম ছবির ব্যক্তির মতো মানসিকতা খুজে পাই নাই। এদের সবাইকে আমার সময় উপযোগী ব্যবসায়ী বলে মনে হয়েছে। তাই আমি ওখানে আরও কিছু ছবি তুললাম। ঘুড়িটা আকারের অনেক বড় তাই এখন অবধি বাসায় নিয়ে আসি নাই। চিন্তুা করছি বৃহস্পতিবারের আগে যদি গত মাসের মাইনেটা পাই তাহলে বৃহস্পতিবার একটা সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় করে বাসায় ফিবর ঘুড়িটা নিয়ে এবং শুক্রবার বিকাল বেলা বাসার সামনে যে খোলা বালির মাঠটা আছে সেখানে লজ্জা শরম ভেঙ্গে ঘুড়ি উড়িয়ে নিজের শৈশবের রঙ্গীন স্মৃতিকে আবার রাঙ্গানী তুলব।


2.jpg

আপনার একটা বিষয় সম্পর্কে হয়তো খুব ভালো ভাবেই অবগত। যদি কোন ব্যক্তি তার শখকে তার জীবন ধারনের পেশা হিসাবে বেঁচে নেয়, সেই ব্যক্তিটার দৈনিক অথবা মাসিক উপার্জন যদি একটু কম ও হয়ে থাকে, সেই ব্যক্তিটা তার পেশাকে নিয়ে কখনোই হাতাশায় ডুবে যান না। সেই ব্যক্তিটা তার পেশাটাকে খুব ভালো ভাবেই উপভোগ করেন এবং অত্যন্ত সুখের একটা জীবন যাপন করেন। আমাদের সমাজে এমন ভাগ্যবান ব্যক্তি কতজনেই বা আছেন। তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য। আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষেই তাদের অধিকতর মাইনের চাকুরীর সন্ধানে ব্যতি ব্যস্ত থাকি এবং অধিক মাইনে উপার্জন করাকেই আমরা সফল ক্যারিয়ার বলে অখ্যায়িত করি। যে ব্যক্তি যতো সফল ক্যারিয়ারের অধিকারী সেই ব্যাক্তিটা জানে জীবনে ভালো এবং সুখে থাকার অভিনয় করাটা যে কি পরিমান কঠিন কাজ।

ফুটপাতের ধারে আমাদের কিছু শখের জিনিস বিক্রেতা যদিও নিজের শখের বসে আমাদের শখের জিনিসগুলো বিক্রি করে থাকেন না, তার পরেও তারা অন্য মানুষের ছোট্ট একটা শখ পুরন করতে পেরে তারা যে পরিমান আনন্দ পান, আমারা হয়তোবা মাসে এক লক্ষ টাকা উপার্জন করে সেই আনন্দটুকু খুজে পাই না, আমাদের সমাজের এই মানুষগুলো মাঝে মাঝে আমাদের জন্য উদাহরন নয়, তারা প্রতিনিয়তই আমাদের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত। আমরা যদি জীবনে কখনো একটু সময় পাই তাদের জীবনের সাথে আমাদের জীবনের তুলনা করার তাহলে আমাদের জীবনটা সত্যিই বড় অসহায় মনে হবে তাদের জীবনের কাছে। যদি আপনি জীবনের অর্থ বোঝার সঠিক চেষ্ঠাটা করে থাকেন।

ধন্যবাদ আমার গল্পে কিছুটা সময় দেবার জন্য।

I'm @shadonchandra a proud Member of @bdcommunity.

Find Me on Twitter, Because I used To Share Beautiful Photography every day on My Twitter Account.

Find Me On Facebook, Because I used To Share Some Beautiful Thought Of Life in my Facebook Profile.

Have a very nice Day...



0
0
0.000
7 comments
avatar
(Edited)

ঘুরি বিক্রেতার সাথে কথোপকথন টা ভাল লাগছে। বিশেষ করে ( মামা মানুষের যখন কোন কাম থাকে না তখন মানুষ তার শখের জিনিসগুলা করার চেষ্টা করে বেশি বেশি,)

0
0
0.000
avatar

একদমে পড়ে শেষ করলাম ভাই।খুব ভালো লাগলো পাঠক হিসেবে।অনেক বেশি ধন্যবাদ শেয়ার করবার জন্য

0
0
0.000
avatar

সুন্দর লিখেছেন। তবে শখের মূল্যটা কমাইয়েন না ভাই। শখের মূল্য আসলেই লাখ টাকা বলা হয়েছে কারণ শখের মূল্য অনেক। এটা টাকা দিয়ে বিবেচনা করা যায় না। শখের জিনিস কখনো কখনো নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশে মূল্য দিয়ে কিনি।

0
0
0.000
avatar

This post earned a total payout of 9.476$ and 4.738$ worth of author reward that was liquified using @likwid.
Learn more.

0
0
0.000