এদেশে ধর্ষণ যেন হচ্ছে বৃষ্টির ন্যায় বর্ষণ,
ভাই আমাকে ছেড়ে দেন। আপনার পায়ে পড়ি, মাফ চাই ভাই। আমি অসুস্থ আমার গায়ে হাত দিবেন না ভাই, প্লিজ!
এভাবে কাকুতি-মিনতি করেও রেহাই পায়নি একটি অসহায় পরিবারের মেয়ে শ্যামলি (ছদ্মনাম)। ধর্ষণের শিকার হয় এক দল নরপিশাচের হাতে। বিচার চাইতে যায় স্থানীয় প্রতিনিধির নিকট। কিন্তু প্রতিনিধির লোভাতুর দৃষ্টিভঙ্গি ও অসৎ আচরণ নিরাশ করে ফিরিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে আইনের শরণাপন্ন হয় কিন্তু ইতিমধ্যে টাকার খেলায় সব উল্টে গেছে। দশের নিকট আবেদন করেও পাওয়া গেলো না সুষ্ঠু বিচার।
এদিকে ধর্ষিতার পরিবারের এক সদস্য রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য এক ব্যক্তি বলে উঠলো, "এই লোকটির বোন ধর্ষণ হয়েছে।" ভাইয়ের কানে এই ভারি ওজনের বাক্য এসে ধাক্কা দিলে লজ্জায় বাড়ি ফিরে যায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো পরিবার। লজ্জায় অবশেষে মেয়েটি একটি পথ বেছে নিলো। 'মৃত্যু'। এটি ছিল একটি কাল্পনিক ঘটনা। এমন অনেক অমানবিক ঘটনাই আমাদের সমাজে ভেসে বেড়াচ্ছে। হয়তো আমরা সব ঘটনা জানতেও পারিনা।
কখনো কি ভেবে দেখেছেন,ধর্ষিতা কোনো নারীর বেঁচে থাকা কত কষ্টকর হয়? ধর্ষিতা নারীর জন্মদাতা বাবা-মা'র কত কষ্ট হয়? পরিবারের সদস্যরা পরস্পর মুখোমুখি হলে কতটা লজ্জার জন্ম দেয় তারা? স্বামীর চোখের সামনে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হলে কি পরিমাণ আকাশ মাথায় ভেঙে পড়ে? যেসব ঘটনা আমরা কল্পনাতেও আনতে পারিনা, বর্তমানে সেইসব ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণের মতো অমানবিক, অস্বাভাবিক ঘটনা কিভাবে যেনো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এদেশে এতো ধর্ষক বসবাস করে ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।
স্বাভাবিকভাবে কোনো ধর্ষক-ই চায় না তার পরিবারের কেউ ধর্ষণের শিকার হোক আবার তারাই ধর্ষণ করে। এদের দুই নীতি। সাধারণ মানুষ সর্বদাই চায় নিরাপত্তা। কিন্তু নিরাপত্তা আর কই রইলো? কিছুদিন পূর্বে গাজীপুরে ধর্ষণের বিচার চেয়ে অভিযোগ দিতে গিয়ে ইউপি সদস্যের কাছে পুনরায় ধর্ষণের শিকার হয় এক পোশাককর্মী। ভক্ষক-ই রক্ষক সেজে বসে আছে। অথচ আমরা জানি-ই না।
বাংলা ভাষায় দুই শ্রেণির মানুষ অবস্থান (position) জেলে। এক. পেশায় যে মাছ ধরে সে জেলে। দুই. যে অপরাধ করে সে যায় জেলে। দুই শ্রেণির মানুষ-ই শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে তৃপ্তি অর্জন করে। মাছ ধরা জেলে ঘাম ঝড়িয়ে অর্থ উপার্জন ও পরিবারকে কিছু দিয়ে তৃপ্তি অর্জন করে। অপরদিকে জেলে যাওয়া ধর্ষক ঘাম ঝড়িয়ে দেহ ভক্ষণ করে তৃপ্তি অর্জন করে। পার্থক্য হলো একজন মানুষ, আর অন্যজন অমানুষ। অমানুষকে জেলে রাখার স্থায়ীত্বকাল ধুমকেতুর সময়ের সাথে বেঁধে দিলে কিংবা মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে ধর্ষিতার মুখে ছোট্ট একটা হাসি ফুটানো যায়।
এদেশে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, হাট-বাজারে কত নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়, তা বেহিসাব। রাস্তার পাগলীটাও ধর্ষণের শিকার হয়ে মা বনে যায়। এমনকি শিশুকে পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে না। গীর্জার মত পবিত্র স্থানেও শিশু ধর্ষিত হয়েছে। শিশুদের দেখলে যেখানে মায়া সৃষ্টি হওয়ার কথা সেখানে পিশাচদের তৈরি হয় উত্তেজনা। ধিক্কার আর থুথু দিতেও বাধে। এরা আসলে শিশুদের পেয়েছে কি? শিশু নাকি পশু? মানুষ হয়ে কিভাবে এত অমানবিক হয় এই ধর্ষক সম্প্রদায়?
ধর্ষক ধর্ষণের সময় কুকুরের স্বভাব ধারণ করে, অথচ ধরা পড়লে হয়ে যায় বিড়াল। এই সমাজে বিড়ালরা কিন্তু এক সময় ছাড় পেয়ে যায়। কিন্তু কাউকে উচিৎ শিক্ষা দেয়া হয়না। এদেশে যদি কোনো ধর্ষককে প্রকাশ্যে ফাঁসির মঞ্চে চড়ানো হয়, এবং কঠিক শাস্তির মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়, তাহলে শাস্তির কথা মাথায় এনে অগণিত ধর্ষকের ধর্ষণের ইচ্ছা নিমিষেই শেষ হতে পারে। ধর্ষকের পরিমাণ কমানো যেতে পারে। এই শাস্তি বিধানের জন্য একটা জোড়ালো প্রতিবাদ প্রয়োজন। যেখানে তৈরি হবে একটি গণ জোয়ার। প্রত্যেকের থাকবে একটাই দাবি ধর্ষকের শাস্তি হোক মৃত্যু। এতে মূখ্য ভূমিকা পালন করা উচিৎ নারীবাদী দাবি করা ব্যক্তিদের। অথচ তারা-ই চুপ। নারীদের পক্ষেই যদি কথা না বলে, তাহলে তারা নারীবাদী দাবি করে একপ্রকার প্রতারণা করছে।
ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সুশিক্ষা। এইসব শিক্ষা হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই আজ অনেকের হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে ধর্ষণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। নষ্ট করছে অনেক নারীর সম্ভ্রম। বিকৃত মস্তিষ্কের এসব মানুষের বিয়ের বয়স হলেই পারিবারিকভাবে ব্যবস্থা করা উচিৎ।
খুব কষ্ট হয় যখন পত্রিকার শিরোনাম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের নিউজ চোখে পড়ে। ইদানিং এই ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বিগত এক সপ্তাহে এমন অনেক নিউজ অমরা দেখেছি, পড়েছি। যেহেতু এটা আমাদের পরিবারের না, তাই মানবিক দিক থেকে খারাপ লাগলেও খুব একটা কষ্ট অনুভব হয় না, যতটা একজন ভুক্তভোগী অনুভব করে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ করেছিল হানাদার বাহিনী। আজ ধর্ষণ করছে এদেশের কিছু কুলাঙ্গার। এই ক'দিনে নারীর প্রতি যে অবিচার হয়েছে, তাতে দেশের ইমেজে একটা দাগ লেগে গেছে।
জাতীয় মহিলা সংস্থার এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “আজ থেকে ধর্ষিতা মেয়ের বাবার নামের জায়গায় লিখে দাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর ঠিকানা লেখ ধানমন্ডি ৩২।" মুক্তিযুদ্ধ তৎকালীন সময়ে যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল তারা উপহার পেয়েছিল একটি স্বাধীন দেশ এবং বীরাঙ্গনা খেতাব।
বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ধর্ষকদের শাস্তি দাবি করছি৷ কুকুর নিধন নয়, ধর্ষক নিধন করা জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। ধর্ষক মুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশ চাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ধর্ষক মুক্ত দেশ উপহার দিন, প্লিজ।
Congratulations @ohabrizvi! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @hivebuzz:
যে দেশ থেকে আইনের শাসন উঠে গেছে, সর্বত্র শুধু "জোর যার মুল্লুক তার"-এরই জয়জয়কার, সে দেশে সুবিচার আশা করা বোকামী। তবুও আশা করি এই ঘৃণ্য কাজের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।