মাছ ধরা -- কাল্পনিক ভূতের গল্প।

avatar

IMG_20210424_161623.jpg
Source

অনিকের ইচ্ছা সে অনেক বড় ডাক্তার হবে। তাই এস.এস.সি পাস করে ঢাকায় একটা ভালো কলেজে ভর্তি হয় সে। পড়াশুনায় বরাবর ভালো অনিক। কিন্তু ঢাকায় তার মন যেনো টিকে না। গ্রামের সেই পরিবেশ, বন্ধুদের সাথে নদীতে গোসল করা, একসাথে হৈ-হুল্লোড় এই সব কিছুই অনেক মিস করে অনিক।কিন্তু আজকে অনিকের মনটা অনেক ভালো। ফাইনাল এক্সাম শেষ, সেই সাথে গ্রীষ্মের লম্বা ছুটি। অনেকদিন বাড়িতে থাকতে পারবে ভেবেই তার আনন্দ হচ্ছে।

সেদিন রাতের ট্রেনেই বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো অনিক। এবার বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কি কি করবে প্লানিং করতে ঘুমিয়ে গেলো। ঘুম ভেঙে গেলো ভোরের দিকে। প্রায় চলে এসেছি। স্টেশনে নেমে রিক্সা খুজতে লাগলো অনিক। রিক্সা নিয়ে ৩০ মিনিটের রাস্তা তাহলে তার গ্রাম।

  • "আরে অনিক বাজান নাকি"

পেছনে ফিরে তাকায় অনিক। তাদের গ্রামের রহিম চাচা। খুব ভালো মানুষ। অনিককে অনেক স্নেহ করেন।

  • "আসসালামু আলাইকুম চাচা, কেমন আছেন"।
  • "আল্লাহ রাখছে ভালো, তুমি কেমন আছো"। ঢাকা থেকে আসলা নাকি? কলেজ কি বন্ধ"।
  • " জ্বি চাচা, কলেজ বন্ধ। তাই বাড়ি চলে আসলাম"।
  • "খুব ভালা করছো বাজান। তাহলে আহো তোমারে বাড়ি দিয়া আসি"।

রহিম চাচার একটা ছেলে আছে, নাম কামাল। অনিকের সাথে পড়াশুনা করতো। কামাল পড়াশুনায় যেমন খারাপ ছিলো, দুরন্তপনায় ছিলো তেমনই সেরা। পড়াশুনা খারাপ ছিলো বলে এস.এস.সি ফেল করে কামাল।

  • " চাচা কামাল এখন কি করে"?
  • "কি আরে করবো, বদমাশইটা পরীক্ষায় ফেল করলো। এরপর পড়াশুনা বাদ দিয়ে দিলো। এখন আমার যে ক্ষেত আছে সেখানে চাষ করে। আর আমি সময় পাইলে রিক্সা চালাই"।

কথা বলতে বলতে বাড়িতে চলে আসে অনিক। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা এগিয়ে দেয়।

  • "বাজান, ভাড়া দেয়া লাগবো না, যাও বাড়ি যাও" বলে একটা হাসি দিয়ে চলে গেলেন রহিম চাচা।

বাবা, মা, ছোট বোন রিনকু সবাই তো অনিককে দেখে অবাক। কোন খবর না দিয়েই চলে এসেছে। মা তো আনন্দে জড়িয়ে ধরলো।

  • "অনিক তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। নাস্তা করে নে।"

মায়ের আদুরে গলায় ডাক। নাস্তাটা শেষ করে অনিক বের হয়ে গেলো কামালের বাসায়। অনেকদিন দেখা হয় না ওর সাথে।

  • "কামাল, এই কামাল বাসায় আছিস নাকি"?
  • "কে? আরে অনিক তুই, কেমন আছিস রে বন্ধু? কবে আসলি?"
  • "এইতো আজকে সকালে এসেছি। নাস্তাটা শেষ করে আগে তোর বাসায় আসলাম।
  • "ভালোই করেছিস আর একদম ভালো সময়ে এসেছিস" কামাল খুব উত্তেজিত ভালো বললো।
  • "ভালো সময়ে এসেছি মানে?"
  • "এই দুই গ্রাম পরে যে হাওড় এলাকা, সেখানে বর্ষায় পানি এসেছে অনেক। মাছও নাকি ধরা পরে। আজকে রাতে কুদ্দুস আর সামাদ কে নিয়ে আমিও যাবো। তুই যখন এসেছিস তাহলে তুইও যাবি।"

অনিকের মনে আনন্দ আর ধরে না। এক কথাতেই রাজি হয়ে যায় সে।

  • "তাহলে কখন যাবো আমরা?"
  • "রাতে ৯ টার দিকে খেয়ে রেডি থাকিস। আমি এসে ডাক দিবো।"

রাত ৯.২০। অস্থির মনে পায়চারি করছে অনিক। এখনো কেনো কামাল আসছে না সেটা নিয়েই একটু চিন্তিত। -"তাহলে কি ওরা আমাকে রেখে চলে গেলো?" মনে মনে ভাবলো অনিক।

  • "অনিক, এই অনিক।"

ফিসফিস করে কেও ডাকলো। অনিকের বুঝতে বাকি রইলো না এটা কামাল। সে আস্তে করে ঘরের দরজাটা খুলে বের হয়ে আসে। এরপর কামালের সাথে হাটা শুরু করে।

-"কিরে দেরি করছিলি কেনো। আমি ভেবেছিলাম আমাকে রেখেই চলে গেছিস তোরা।"
-"ধুর কি যে বলিস না তুই। তোকে রেখে কেনো যাবো। আচ্ছা শোন দুইটা নৌকা আছে। একটাতে আমি আর তুই যাবো অন্যটাতে কুদ্দুস আর সামাদ।"
-"ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস।"

প্রায় ১ ঘন্টার পথ হেটে আমরা সেই হাওড়ে এসে পৌছালাম। হাওড়ের পানিতে অনেক নৌকা ভাসতে দেখা যাচ্ছে। তার মানে আরো অনেকেই আসে মাছ ধরতে।

  • "নে নে তারাতাড়ি কর দেরি হয়ে যাচ্ছে।সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোদের জন্য"।

কুদ্দুস একটু তারা দিলো। অনিক আর কামাল একটা নৌকা নিয়ে হাওড়ের পশ্চিম দিকে চলে গেলো। ওদের নৌকাটা আকারে ছিলো একটু বড়। মাঝখানে বেশ বড় আকারের একটা ছাউনিও রয়েছে। পশ্চিম দিকটায় নাকি মানুষ খুব একটা আসে না। তাই কামাল আর অনিক পশ্চিম দিকে মাছ ধরতে আসে। এরপর তারা ছিপ ফেলে বসে পরে। ভালো মাছ ধরা পরতে লাগলো দুইজনের। দুই জনই খুব খুশি।

রাত তখন অনেক হয়ে গেছে। আকাশে অনেক বড় চাঁদ উঠছে আর চারিদিক আলো করে রেখেছে।

  • "অনিক চল আর একটু ভেতরে ওইযে একটা ছোট দ্বীপের মতো দেখা যাচ্ছে ওইখানে যাই। তাহলে আরো ভালো মাছ পাওয়া যাবে।"

অনিক একটু খেয়াল করে দেখলো অন্য সবাই যারা মাছ ধরতে এসেছে তাদের কারো নৌকাই দেখা যাচ্ছে না। তারা একটু দূরে চলে এসেছে।

  • "নারে চল ফিরে যাই। এমনিতেই অনেক দূরে চলে এসেছি।"
  • "আরে তুই পাগল নাকি? এতো ভালো মাছ পাইতেছি চলে যাবো কেনো।"

কামাল কথা শুনে না। জোর করেই আরো ভেতরে সেই দ্বীপের কাছে চলে আসে এরপর আবার মাছ ধরা শুরু করে। কিন্তু অনিকের ভয় হতে থাকে। তারপরও সে ভাবে "কি আর হবে। কামাল তো আছেই সাথে।"

প্রায় ৩০ মিনিট পার হয়ে যায় কিন্তু একটা মাছও ধরতে পারে না অনিক। খুব রাগ হতে লাগলো অনিকের। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো সে। রাত ১.৩০ টা বাজে। বাড়ি ফিরতে হবে।

  • "কামাল, এই কামাল রাত ১.৩০ টা বাজে, বন্ধু চল বাড়ি ফিরে যাই।"

কামাল কোন জবাব দেয় না। তারা নৌকার দুই সাইডে বসে ছিলো। নৌকার মাঝখানে বেশ বড় একটা ছাউনি যেখানে ওরা ওদের মাছ গুলো রেখেছে। অনিক উঠে দাঁড়ায়। "কামালকে তো দেখা যাচ্ছে না তাহলে ও কি ছাউনির ভেতরে"। এই কথা চিন্তা করতে করতে ছাউনির দিকে আগায় অনিক। কাছে যেতেই কেমন একটা বাজে গন্ধে তার মাথা ঘুরে যায়। কামালকে ডাকতে থাকে কিন্তু কোন সারা দেয় না কামাল। ছাউনির পর্দা সরিয়ে ভেতরে তাকায় অনিক।

ভেতরে কুপির আলোয় সে স্পষ্ট দেখতে পায়, কামাল বসে বসে কাচা মাছ চিবিয়ে খাচ্ছে। আর মাছের রক্তে কামাল হাত মুখ মেখে আছে। কামালের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে।

  • "কামাল তুই এটা কি করছিস। কাচা মাছ কেনো খাচ্ছিস।"

কামাল অট্টহাসি দিয়ে উঠে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় অনিক। ঠিক সেই মুহুর্তে ছাউনির অন্যপাশে চোখ যায় অনিকের। কামালের নিথর দেহ পরে আছে সেখানে। তাহলে এখানে কামালের মতো বসে আছে, সে কে? অনিক আর কিছু ভেবে পায় না। সে নিজের জীবন বাচাতে পানিতে ঝাপ দেয়। যত শক্তি ছিলো সাতার কাটতে থাকে। পেছনে হাসিটা যেনো বাড়তেই আছে আর কাছে আসতে লাগলো। অনিক পেছনে তাকিয়ে দেখে আকৃতি ছাড়া কিছু একটা তার দিকে ভেসে আসছে তাকে ধরার জন্য। এটা দেখে সে আরো জোরে সাতার কাটা শুরু করে। হঠাৎ করেই কেউ অনিকের পা ধরে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। অনিক অনেক চেষ্টা করতে থাকে তার পা ছুটানোর কিন্তু কোন ভাবেই কাজ হয় না। পানির নিচে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করলো। অনিক হাল ছেড়ে দেয়। তার গায়ে আর শক্তি পায় না সে। মা, বাবা আর ছোট বোনটার কথা তার মনে পড়তে লাগলো। মনে পড়তে লাগলো তার ডাক্তার হয়ার সপ্নের কথা।

সমাপ্ত.



0
0
0.000
0 comments