করোনা এবং আমাদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রা
করোনা এবং আমরা
আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একেবারে চেঞ্জ করে দিয়েছে করোনা। আমরা কখনো ভাবতে পারিনি, সবকিছু এভাবে চেঞ্জ হয়ে যাবে ছোট্ট একটা ভাইরাসের কারণে। এখন রাস্তাঘাটে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ। কেউ বের হলে আগে থেকে মাস্ক আছে কিনা দেখে নেন।
স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভর্তি নিতে চায় না। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এখন বাইরে সময় কাটায় না। বাইরে গেলেও বাসায় ফিরে সবাই আগে হাত ধোয় বা গোসল করে নেয়।
করোনা কিভাবে আমাদের জীবন পাল্টে দিয়েছে তার কয়েকটি পয়েন্ট এখন আলোচনা করব..
পড়াশোনা
মার্চ মাস থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি আমাদের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এর আগে সম্ভবত কখনো পায়নি।
এইচএসসি পরীক্ষা হবে হবে করেও হচ্ছে না। অনার্স পরীক্ষা গুলোও আটকে আছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় একটা স্থবিরতা নেমে এসেছে।
যদি এই অবস্থা আরো কিছুদিন ধরে হতে থাকে, তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একটা বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে এবং এই সংকট কাটিয়ে উঠতে আমাদেরকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হতে পারে।
চিকিৎসাসেবা
করোনা জনিত কারণে একেবারেই ভগ্নদশা বিরাজ করছে আমাদের চিকিৎসাসেবায়। স্বাভাবিক রোগের চিকিৎসাও হাসপাতালগুলোতে এখন পাওয়া যাচ্ছে না। বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অনেকে।
আবার অনেকে হয়তো মারা যাচ্ছে না কিন্তু অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে যাদের অ্যাজমা বা অন্য কোন কারণে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা আছে, তাদেরকে তো হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
চলাচল
আমাদের স্বাভাবিক চলাচলে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করেছে করোনা। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া একটা ভীতিকর অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানুষ প্রয়োজন ছাড়া দূরে কোথাও ভ্রমণ করছেন না। পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত।
অফিস কলকারখানা
করোনার কারণে যে বৈশ্বিক মন্দা অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে, সেই ধাক্কায় অনেক ছোট ও মাঝারি শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো ধুঁকে ধুঁকে চলছে।
নতুন করে কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে তো না। যারা বিভিন্ন চাকরিতে আছে অনেকেই ছাঁটাইয়ের শিকার হচ্ছে। কোথাও কোথাও বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি কর্তন করা হচ্ছে।
বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কথা না বললেই নয়। করোনার কারণে অনেককে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে।
বিচারব্যবস্থা
আমরা এমন এক নষ্ট সমাজে বাস করি, এমনকি করোনার এই দুঃসময়ে মাদক, দুর্নীতি, ধর্ষণ.. এগুলো থেমে নেই।
কিন্তু বিচারের ব্যবস্থা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা স্বাভাবিক কারণে আগের মতো তাদের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারছে না।
যদিও ভার্চুয়াল আদালত তার কার্যক্রম চালাচ্ছে, কিন্তু সেটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। যার ফলে বিচারব্যবস্থায় একটা বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এটি স্বাভাবিক হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
ব্যবসায়ী সমাজ
টানা বেশ কিছুদিন লকডাউন দেওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ বহন করতে হয়, ব্যবসা চলুক বা না চলুক। যেটিকে বলা হয় ফ্যাক্টরি ওভারহেড।
এই খরচটি তাদেরকে বহন করতে হচ্ছে। যেমন শ্রমিকের বেতন আপনাকে দিতেই হবে। তাই ব্যবসায়ীরা অনেক কষ্ট আছে।
তাদের জন্য কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করলেও তাদের সংকট কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে না।
আর্থিক খাত
আর্থিক খাত বলতে ব্যাংকিং এবং ইন্সুরেন্স, এছাড়াও আছে ক্যাপিটাল মার্কেট। বাংলাদেশের আর্থিক খাত গুলো মূলত এদেশের ব্যবসার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
যেহেতু ব্যবসাগুলো স্ট্রাগল করছে, ফলে একটা প্রভাব পড়ছে আর্থিক খাতে। ইতিমধ্যে কিছু ব্যাংক বেতন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। অনেকেই শুনেছি ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে।
লেখাটা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে, তাই আমি অন্যান্য সেক্টরগুলো নিয়ে আজ আলোচনা করব না। হয়তো অন্য কোনদিন.. অন্য কোন লেখায়.. বাকি বিষয়গুলো তুলে আনবো।
তবে সার্বিকভাবে এটা বলা যায় যে, করোনার কারণে আমাদের দেশের সকল সেক্টরের মানুষই কম বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে।
খুব শীঘ্রই আমরা এই সংকট কাটিয়ে আবার আগের মত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাব... এটাই এখন একমাত্র প্রত্যাশা।
Congratulations @tasri! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!