Favourite season

avatar
(Edited)

ছোটবেলা থেকেই শীতকাল আমার ভীষণ পছন্দের। বাঙালিদের ভাগ্যটা ভীষণ ভালো, কারণ প্রত্যেকবারেই প্রত্যেকটি ঋতুকে নতুন ভাবে সাজতে দেখার সৌভাগ্য জোটে। শীতকালের কথা বলতেই প্রথমেই যেই স্মৃতিগুলো নিজের মধ্যে ভেসে ওঠে তা হলো রুক্ষতা, শুকনো পাতা আর ঝরে যাওয়া শূন্যতার স্মৃতি। বৃক্ষের ঝরে যাওয়া পাতাগুলোর বৈশিষ্ট্যই শীত কালকে আরো বেশি সুন্দর করে তোলে। শীতকালের জন্যই অন্য ঋতু গুলোকে একটু বেশি আনন্দের সাথে বরণ করতে প্রস্তুত থাকি।

আমরা যদি জীবনের শূন্যতাটাকে খুঁজে না পেতাম তাহলে অন্য সব আনন্দগুলো ফ্যাকাশে মনে হতো। ঠিক তেমন ভাবে শীতকালও ব্যতিক্রম নয়। যদি একটু সংবেদনশীলতার সাথে বর্ণনা করার চেষ্টা করি, তাহলে শীত হলো আপন রূপে, আপন অনন্যতায় অনন্য। সকালের সূর্য যখন উদয় হতে ভুলে যায়, লোভনীয় খেজুরের রসের জন্য আমরা ঘুম থেকে উঠতে ভুলি না। যখন চোখ দুটো কোন ছোট ফুলের উপর পড়ে, এর মধ্যে ছোট ছোট শিশুর বিন্দুগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে যেন মনি মুক্তা।

এই ঋতুতে প্রকৃতি যেন প্রতিদিনই এক রহস্যঘন রূপ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। শীতের সকালটা আমার কাছে ঠিক যেন রূপসী নারীর শরীরে নকশী কাথার চাদরের মত। যদি বিমুগ্ধ হতে চান তাহলে শীতের সকালটায় কুয়াশার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিন। আবছা ফুটে ওঠা জ্বলন্ত অগ্নিগোলকের সৌন্দর্যে নিজেকে বিমুগ্ধ করুন।

"ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠো রে”

ছোটবেলায় প্রায়ই মা এই কবিতাটা শুনিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতো। ঘুম থেকে ওঠা তখন যেন এক যুদ্ধ ছিল। যুদ্ধ শেষ করে যখন জেগে উঠতাম, জানালা দিয়ে উঁকি দিলেই ভারী কুয়াশার আচ্ছাদন খুঁজে পেতাম। প্রচন্ড শীতে পুরো শহর জেগে উঠতো এক হরিণীর মত। ঘর থেকে বের হলেই দেখা যেতো অদ্ভুত সৌন্দর্যে সেজেছে পরিচিত সেই রাস্তা। ছোটবেলায় দেখতাম গ্রামের রাস্তাগুলোতে, বৃদ্ধরা পা থেকে মাথা পর্যন্ত চাদরে মুরে তাদের প্রাতঃভ্রমণ সারতে রাস্তায় বের হতো। ছোট ছোট শিশুরা শীতের মধ্যে জড়োসড় হয়ে মায়ের আঙ্গুল ধরে স্কুলে যেতো।

আমার এখনো মনে আছে তখন খুব বেশি শীতের কাপড় কেনা হতো না। মা, বাবার পুরনো চাদর দিয়ে আমাকে মুড়িয়ে দিত। চায়ের কাপে যখন সকালের উষ্ণতা একটু কমানোর চেষ্টা করতাম, তখন আশেপাশের সকল প্রতিবেশীরা মিলে উনুনের উত্তাপ উপভোগ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতাম। শীত শীত করে কি আর ঘরে থাকা যেত, শীতকে উপেক্ষা করেই বাবা চলে যেত নিজের কাজে। আমি যখন সোহাগি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নিজের বিলাসী ভাবনায় ডুবে যেতাম। তার ফাঁকে মা বকা দিয়ে স্কুলে জোর করে পাঠিয়ে দিত।

বাবা মাঝে মধ্যেই বলতো আমরা নাকি বেশ অলস। একটু শীত হলেই বিছানা থেকে উঠতে চাই না। কিন্তু বাবা নাকি এমন শীতের মধ্যেই মাছ ধরতে চলে যেত। খেটে খাওয়া মানুষগুলো বেশ আলাদা হয়ে থাকে। তাদের কাছে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সবকিছুই একরকম। শীতকালে আমি নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাই। নানা বয়সের নানা ধরনের মানুষের আচরণ, ভাবভঙ্গি অনুসরণ করি খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।

মধ্যবিত্ত আর খেটে খাওয়া মানুষগুলো কিভাবে প্রখর শীতের মধ্যে নিজেদের জীবন পরিচালনা করে। সত্যি বলতে শীত বলতে কোন কিছুই থাকে না। অন্য সাধারণ ঋতুর মতো এই শীত তেমন একটি ঋতু যার মধ্যে তারা আরো নিজেদেরকে খাঁটিয়ে তুলতে প্রস্তুত হয়।

সাধারণত অক্টোবরের শেষের দিকেই শীত শীত ভাবটা চলে আসে। কিন্তু তার আগে আমাদের মুখোমুখি হতে হয় সারাদিনের বৃষ্টির সাথে। মা বলতো, এই বৃষ্টি নাকি শীত নিয়ে আসবে। কম্বল জড়িয়ে গুটিসুটি হয়ে একটা মজার ঘুম খুব আরামদায়ক।‌ শীতের এই মুহূর্তটা আমার সব থেকে পছন্দের। কিন্তু এই আনন্দ মাটি হতে বেশ সময় নিত না। বুঝতে পারছেন তো আমি কিসের কথা বলতে চাইছি?

হাড় কাঁপানো এই শীতের মধ্যে মা যখন জোর করে তুলে স্কুলে পাঠিয়ে দিত। তখন মনে হতো এই স্কুলটা যে কে আবিষ্কার করেছে। কিন্তু সকালের সেই কুয়াশার রাস্তা উপভোগ করার মধ্যেও অন্যরকম অনুভূতি ছিল। কোনরকম ক্লাস শেষ করে যখন বাড়ি ফিরেই মায়ের হাতের লোভনীয় সকল পিঠার আয়োজন দেখতাম মনটাই ভালো হয়ে যেতো। গত বছরের শীতকালটা বেশ আনন্দের গিয়েছিল।

আমি আমার বোন-দুলাভাই, ভাইয়া-ভাবি সবাই মিলে গ্রামে গিয়ে একটা বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করেছিলাম। সাধারণত এখন পরিবারের সবাইকে একসাথে পাওয়া যায় না। কিন্তু যখনই গ্রামে যাওয়া হয় সবাই একসাথে ছুটি নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে সবাই সবার সাথে দেখা করতে পারে। মাঝে মধ্যে এই দেখা করার আয়োজনটা পূরণ না হলেও।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে এক দফা পিকনিক খাওয়া-দাওয়া হয়ে যায়। তাই এবারের শীতের সময় এই আনন্দের মুহূর্তগুলোকে হারিয়ে ফেলতে চাই না। আর অবশ্যই একটা ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করতে ভুলবেন না। কারণ শীতের প্রধান আকর্ষণীয় আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে থাকে ব্যাডমিন্টন খেলা।

Image

macro-shot-autumn-leaf-with-water-droplets-it_181624-38719.webp



0
0
0.000
2 comments
avatar

শীতকালের মজাটাই অন্যরকম, নতুন সবজি,নতুন আবহাওয়া। গরম গরম খাওয়ার মজাই আলাদা। আসলে শীতকালে সবার বন্ধ থাকত তাই স্মৃতিগুলো খুব মধুর ছিল, এভাবেই মনের অজান্তেই শীতকাল আমাদের প্রিয় হয়ে উঠেছে ।

0
0
0.000