লেখক মস্তিষ্ক

avatar

IMG_20211010_152811.jpg

আমি কখনো মধ্যরাতে জেগে পোস্ট লেখার চেষ্টা করিনি। যদিও আমার লেখার স্বাধীনতা রয়েছে মধ্যরাতে এবং ঘুমের মধ্যে মাথার মধ্যে নানা ধরনের বাস্তবিক কথা ঘোরাঘুরি করে ।মাঝেমধ্যে যেটা আমি আমার লেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারি, আবার মাঝেমধ্যে সেটা পারিনা। তাই আজকাল মনে হয় কিছুটা চেষ্টা করা প্রয়োজন , রাতের ভাবনা গুলোকে লেখার মাধ্যমে পোস্টের মধ্যে তুলে ধরা । যার কারণে এখন আমিও রাতে লেখার প্রবণতা রাখি ।

কিন্তু সেটার কারণে আমার রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, প্রতিদিনই প্রায় সকালে দেরি হয়ে যায়। রাতের ঘুমকে নিজের থেকে দূরত্বে রাখার জন্য কফি পান করি। আমার এমন অভ্যাস এর কারনে, আমার মেয়েটাও রাতে বেশ কয়েকবার উঠে। যদিও আজকের রাতটা আমাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য সুখকর নয়। আমি বরাবরই চেষ্টা করি আমার স্ত্রীকে ভালো রাখার, তার প্রতি যত্নশীল হওয়ার। কিন্তু আমার স্ত্রী আমার এই লেখার পেশাটাকে পছন্দ করেনা। সে ভাবে এটা কোন কাজ নয়। আমার এমন কিছু করা দরকার যেটা আমাদের জীবনে আরও স্বাচ্ছন্দ বয়ে আনবে।

এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু আজকে ঝগড়াটা বেশি হয়ে গিয়েছে । যার কারণে আমার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে তার ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করেছে। আমি জানিনা সে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার নামে কি দোষারোপ করছে। যার কারণে এই রাত আমাদের জন্য স্বাভাবিক রাত নয়। আমারা সুখের যে স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটি ধীরে ধীরে দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে।

এখন তার কাছে বিরক্তিকর স্বপ্ন। এমনটা হওয়ার কারণ, সে কখনো আমার লেখা পড়ে দেখেনি। আমি আজ পর্যন্ত তাকে নিয়ে অনেক গল্প লেখেছি। যে গল্পের রাজকন্যা আমার স্ত্রী ।‌ আমি বিশ্বাস করতাম সে যখন আমার গল্প গুলো পড়বে আনন্দিত হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সে কখনোই উৎসাহ প্রকাশ করেনি।

আমি চেষ্টা করছি একটি ধীর কচ্ছপের গল্প লিখতে। যেখানে কচ্ছপ এবং খরগোশের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিল কচ্ছপ। কচ্ছপ যতই ধীরগতিতে চলুক কচ্ছপ কখনো থেমে থাকে নি। যার কারণে তার এমন বিজয়ের প্রত্যাশা করা যায়। আমিও আমার স্ত্রীর ব্যাপারে এমন ধারণাই রাখি। আমাদের বিয়ের সাত বছরের সম্পর্কে আমি আমার স্ত্রীর কাছে আমার জন্য কখনো ভালো কথা শুনে নি।

কারণ তার ধারণা আমি আমার স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য কিছুই করছি না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন ।‌ আমি তাদের জন্যই সবকিছু করছি। আমি বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে ছোটবেলায় পেন্সিল দিয়ে একটি স্কেচ ড্রয়িং করেছিলাম । যেখানে সম্পর্কটা সমানভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে কোন ঢেউ খেলানো পথ নেই এবং বাধা দেওয়ার জন্য কোন পাথর নেই। কিন্তু বাস্তবতা আজ আপনাদের চোখের সামনে।

আমি মনে করি আমার এই লেখা আমি বেশিদিন লেখতে পারবোনা।

আমি দীর্ঘ জীবনে, আমার লেখার জন্য বেঁচে থাকতে চাই । আমি বর্তমান না ভেবে আমি আমার লেখা নিয়ে ভবিষ্যত‌ চিন্তা করে রেখেছিলাম।‌ যেটা আমার জন্য টাইম ক্যাপসুল এর মত কাজ করছিল। যেটা অপরিবর্তনীয়। এখন আমার লেখা আমার দিকে ফিরে তাকাতে সক্ষম হবে। মানুষের মুখে প্রশংসায় প্রশংসিত হবো। মানুষ আমার লেখার জন্য অপেক্ষা করবে।

"আপনার লেখা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন ভালো কিছু লেখা আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য" যদিও এটি স্বপ্ন।

আমি যদিও সংগ্রাহক জীবন এবং অন্যর উপর নির্ভর করা জীবন পছন্দ করিনা। লেখকরা যাযাবরের মতো। যাদের জীবনের উচ্চ স্বাধীনতা থাকে । সেই স্বাধীনতা থেকেই তারা তাদের লেখা প্রয়াস করে । এখন আমাকে শিকারী-সংগ্রাহক এর মত লাগছে ।‌‌

যেখানে আমি একটি অকেজো জিনিস। শুধুমাত্র একটি খোলস পড়ে আছি। সম্ভবত এটি আমার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কে চালিত করে। কারণ আমাদের গতিশীলতার সাথে আমরা যা বহন করি, তার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। অত্যাধিক বহন এবং দ্রুত সারানোর সম্ভাবনা আমাদের হারিয়ে ফেলে। খুব কম বহন করলে এবং আমাদের জীবনের চাহিদা পূরণের ক্ষমতা বাঁচিয়ে রাখা যায়।

মনে হচ্ছে কেউ ধীরে ধীরে আমার পৃথিবীতে গ্রাস করছে। মাঝে মধ্যে মনে হয় আমি স্থির হয়ে যাই । আমার যতটা স্টোরেজ রয়েছে আমি হয়তো তার থেকে বেশি বহন করতে চাচ্ছি। এখন কিছুটা জীবনকে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন । যেখানে আমার পরিবারের খুশি সেইদিকে পরিচালনা করা দরকার।

এটা আমার বর্তমান ভাবনা, যেটাকে আমি আমার লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করছি। আমি সম্পূর্ণরূপে জানিনা এই লেখাটা আমার স্ত্রীর কাছে কখনো পৌঁছাবে কি না। আমি এই অসুস্থ জীবন থেকে কখনো সুস্থতার দিকে ফিরে যেতে পারব কিনা। আমি আমার নিজের জীবনকে নিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারছি না।

যদিও এটা সাধারণ মানুষের কাছে সাধারণ। কিন্তু আমার মস্তিষ্কে সমস্ত অংশকে হত্যা করছে যা আমাকে আমার প্রাণ থেকে কেউ আলাদা করে দিচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় ভয়, নিজের অদক্ষতা , ও তিক্ততা খারাপ অভ্যাস, সবকিছুই আমাকে ঘিরে ধরেছে । আরো অনেক কিছু বাকি রয়েছে আমি ভাবছি। আমার মস্তিষ্কের আর কতটুকুই বা বাকি থাকতে পারে যেটা আমার লেখার জন্য প্রয়োজন।

আমি নিত্য দিনের জীবন নিয়ে সংস্করণ শুরু করি। কিন্তু এই মুহূর্তে এটা সম্ভব নয়। কারণ নিত্য দিনের জীবনের আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে।

আমি আমার পরিবারকে নিয়ে একটি নিখুঁত দিনের কথা ভাবছি। যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমাদের ভালোবাসা দিয়ে সম্পূর্ণ হবে। প্রতিটি সময় সেরা সময় হবে ।আমাদের প্রতিটি চিন্তা আমাদের জীবনের জন্য হবে। আজকে এবং কালকের মধ্যে অনেক ব্যবধান তৈরি হবে । যেখানে শুধু আমাদের ভালোবাসা এবং আমার লেখার প্রতি তার শ্রদ্ধা থাকবে। আমি অনুমান করছিলাম এটি অসম্ভব।

একটি নিখুঁত জীবন বা সম্পর্কের ফলাফল কি হবে?

নিখুঁত জীবন কি , কোন নিখুঁত শর্ত দিয়ে শুরু হয়? জীবনে পরিপূর্ণতা প্রয়োজন । এমন কিছু সম্ভব না হলেও চেষ্টা দরকার। সেটাই আমি করে যাচ্ছি । আমি বিশ্বাস করি সাত বছরের সম্পর্কটা একদিনে ভেঙে যাবে না। কোনো নতুন উদ্ভাবনের অবকাশ ঘটবে । যেখানে আমি নিখুঁত রং দেখতে পাবো।

আমার এই চেষ্টা মানে অপেক্ষা, মানে চিরন্তন অতৃপ্তিতে চিরতরে অপেক্ষা করা। এটি বেঁচে থাকার একটি উপায়।

আমাদের সবার জীবন অসম্পূর্ণ। তবে আমাদের কাছে যা আছে, তা দিয়ে আমরা আমাদের সেরাটা গুছিয়ে নিতে পারি। যদিও এটি আমার অর্ধ মস্তিষ্কের ধারণা।



0
0
0.000
0 comments