বাবা
আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, কারন আমার বাবা বেঁচে আছে। হয়তো আল্লাহর অশেষ রহমত রয়েছে আমার পরিবারের উপর। একটি শিশুর জন্য সবচেয়ে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা, যখন সে তার বাবার আঙুল ধরে খেলতে যায়। আমি ছোট একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। একজন বাবা যে কিনা 1988 সাল থেকে নিজের ছেলেমেয়েদের লালন পালন করে চলছে। তখন তার প্রথম ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছিল, প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি তাকে মহৎ করে তুলেছিল। করিম সাহেব বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করেন। করিম সাহেবের এখন চার সন্তান, তার মধ্যে দুটি মেয়ে ও দুটি ছেলের বাবা তিনি। তিনি এই বছরে ৯০ বছরে পা রেখেছেন।
সেই সময়টাতে পরিবারের সকল চাহিদা পূরণ করা করিম সাহেবের জন্য অনেক কঠিন ছিল। ছেলেমেয়েদের যথাযথ শিক্ষা দেওয়া, খাবার, ওষুধ, কাপড় সরবরাহ করা এই সবকিছু সেই সময় তার জন্য একটি বিশাল পরীক্ষা ছিল। কিন্তু তিনি বরাবরই অনেক আশা নিয়ে নিজের ছেলেমেয়েদের সঠিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। নিজের সীমিত আয়ের মাধ্যমে তিনি দুর্দান্তভাবে নিজের পরিবারকে পরিচালনা করেছেন, যার কারনে এখন প্রত্যেকে স্বনির্ভর হয়েছে। করিম সাহেবের চার সন্তানি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক পাস করেছেন এবং তারপর সবাই সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন। তার বড় ছেলে এবং ছেলের বউ উপজেলা সদরের প্রধান সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে দুই জনই কর্মরত এবং তারা সেখানেই বসবাস করে।
কিন্তু সে বড় ছেলে হিসেবে সে কোন দায়িত্ব পালন করেনি। সে তার বাবা-মায়ের দেখাশোনা করেনি, এমনকি মাসেও তাদের সাথে ফোনে কোন যোগাযোগ করে না। তারও এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। তারা দুই জনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমবিবিএস পড়ছে। করিম সাহেবের বড় ছেলে খুব বেশি হলে বছরে একবার অথবা দুবার তাদের সাথে দেখা করে। কিন্তু তাদের খরচের জন্য সে কোন ব্যয় করতে প্রস্তুত ছিল না। এমনকি যখন তার করিম সাহেব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, তখন সে বাবার সাথে না থেকে নিজের স্ত্রীর সাথে শশুর বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। তার স্ত্রীও একজন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা।
কিন্তু তিনি কখনোই শিক্ষার আলোর মত নিজের জীবনে সবুজ কিছু প্রতিফলিত করতে পারেনি। সে সবসময় তার শাশুড়িকে তুচ্ছ মনে করতো এবং তার শাশুড়ির সকল কথায় বিরক্ত হতেন। তার শাশুড়ি সব কিছু সহ্য করে অসুস্থ মানুষের মতো নীরব থাকতেন।
বছর ঘুরতেই সময় পাল্টে যায়। করিম সাহেবের বড় ছেলে এখন নিজেও শ্বশুর হয়েছে এবং পারিবারিকভাবে সে এখন জীবনে ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। নিজের সকল কষ্টের প্রতিদান হিসেবে সেও নিজের ছেলে এবং ছেলের বউ এর সাথে থাকতে চায়। কিন্তু ভৌগলিক দূরত্বের বদলে মানসিক দূরত্ব তাদেরকে একসাথে থাকতে দেয় নি। তার ছেলের বউ ও তার শাশুড়ির আচরণ একেবারেই পছন্দ করে না এবং অবশেষে করিম সাহেবের ছেলের বউ তার অন্যায় উপলব্ধি করতে পারে এবং সে নিজের শশুর শাশুড়ির সাথে ঠিক করেনি এটা তিনি বুঝতে পারেন। করিম সাহেব প্রথম বড় ছেলে এখন ভীষণ অসুস্থ এবং এখন তার নিজের বাবার সাথে গ্রামে থাকতে তার অগণিত সময় রয়েছে। কারণ তার অসুস্থতার কারণে তার ছেলে এবং ছেলের বউ তার সাথে থাকতে পছন্দ করে না।
নিরুপায় হয়ে সে তার বাবাকে ফোন করেন এবং বাবাকে বললেন দয়া করে আপনার বাড়িতে আমাকে থাকতে দিন আমি জানি সেখানে ভালোবাসা এবং যত্নের কমতি হবে না। অবশেষে করিম সাহেব তার পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি আশ্রয়স্থলে নিজেদের বাকি জীবন কাটান। অবশেষে তার প্রথম সন্তানের সন্তানেরাও বুঝতে পেরেছিল যে পারিবারিক ভালবাসা এবং সংযুক্তি ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছুই নেই এবং তারা তাদের অন্যায়ের জন্য নিজের বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে ছিলেন।
এটা নতুন কোন গল্প নয়, হয়তো আমাদের আশেপাশে এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। কিন্তু আমরা উপলব্ধি করতে পারি না বাবা মায়ের সাথে যেই আচরণটা আমরা করছি, সেটা হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাবা-মা বেঁচে থাকা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। তারা আমাদের একমাত্র ছায়া, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবা-মা আমাদের আগলে ধরে রাখে।
বাবা মায়ের তুলনা কিছু দিয়ে বোঝানো সম্ভব না , আর এটাই নিয়ম যেটা আপনি করবেন যেটা আপনি দিবেন কোন না কোন সময় সেটা আপনি ফেরত পাবেন , বাবা-মার কিছু করার দরকার নেই তারা থাকাটা যথেষ্ট ,
বাবা মা যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আমাদের মধ্যে একটা নির্ভয় কাজ করে। তারা আমাদের ছায়া হয়ে থাকে। যখন চিন্তা করি একটা সময় বাবা-মা থাকবে অসহায় মনে লাগে।।
বাবা ব্যাক্তিটি এ পৃথিবীতে কি সেটি টের পাওয়া যায় যখন নিজে বাবা হয়ে সন্তান আগলে রাখার দায়িত্ব কাঁধে আসে।
করিম সাহেব নিশ্চয়ই অবহেলার যোগ্য প্রতিদান পেয়েছন দ্বিতীয় জীবনে, এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা৷
কারন সন্তান অল্প বিস্তর হলেও বাবার কিছু গুন আত্নসাৎ করে, যার ফল করিম সাহেবের ছেলেমেয়ের বেলায় ঘটেছে।
👍💝
ঠিক বলেছেন ভাইয়া, ছেলেমেয়েরা ততক্ষণ বাবা-মায়ের ভালোবাসাটা সঠিকভাবে বোঝে না যতক্ষণ না সে সেই সেই জায়গায় পৌঁছায়। তখনই হয়তো বুঝতে পারে বাবা-মা কতটা কষ্ট করে নিজের সন্তানদের বড় করে।
বাবা-মায়ের ভালোবাসা আলাদা,কোনো ছেলে-মেয়ে তার বাবা-মাকে কখনওই ততটুকু ভালোবাসতে পারবে না যতটুকু তার বাবা-মা তাকে ভালোবেসেছে,অবশ্য সে আবার তার নিজের ছেলে-মেয়েকে ততটুকু ভালোবাসতে পারবে...এ এক জটিল তারপরও সহজ সমীকরণ...
বাবা মায়ের ভালোবাসার প্রতিদান কোন সন্তানই হয়তো এই পৃথিবীতে দিতে পারেনি। একমাত্র নিঃস্বার্থভাবে যদি কেউ ভালোবাসে সেটা আমাদের বাবা-মা।