স্বপ্ন

avatar

মাষ্টার বাড়িতে আছেন নাকি? ভোর হতে না-হতেই মাষ্টার মানে ইউসুফ খানের ডাক পড়ে। ইউসুফ খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ইউসুফ খান শিক্ষকতা করার কারনে মাষ্টার ডাকে তা নয়, গ্রামে কেউ একটু পড়ালেখা করলে মাষ্টার বলে ডাকে।
ইউসুফ খান নিজেও যেমন শিক্ষিত তেমনি নিজের সব কয়টা ছেলেমেয়েদের ও পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ মতো মানুষ করেছেন। শিক্ষিতের পাশাপাশি সবাই সরকারি চাকরিও পেয়ে যায়, ছোট ছেলে ছাড়া। ছোট ছেলে এখনে পড়ালেখা করে। এইসব কারনে গ্রামে আলাদা একটা গ্রহণ যোগ্যতা আছে খান সাহেবের।

ইফতেখার ইউসুফ খানের ছোট ছেলে, পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ছে ইফতেখার। ভাই বোনদের সবার ছোট, তাই অনেক আর ভালোবাসায় বেড়ে উঠা। গ্রামের সবুজ প্রকৃতিতে যার বেড়ে উঠা, কৈশোরের স্মৃতি ঘাসের সাথে কিংবা স্বচ্ছ দিঘির জলে সাতার কেটে, আলোছায়ায় অবিমিশ্র হয়ে ইথারে ভেসে যায় দূরন্তপনা সে তো স্বপ্ন দেখবেই একটি সুন্দর সমাজের, রাষ্ট্রের। সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে চায়।

বিতর্ক করা ইফতেখারের খুব পছন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথেই বিতর্ক দলের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। পড়ালেখার গভীরতা বেশি বলে বিতর্কে অল্প কয়দিনেই বেশ নাম করে ইফতেখার। দারুণ আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠে ইফতেখার। তার স্বপ্ন তার শিক্ষক বাবার মতো শিক্ষক হতে, গ্রামের সবাই যাকে আদর করে মাষ্টার বলে ডাকে।

সে চায় গ্রামের মানুষ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক, নতুন বইয়ের সুভাষে বেড়ে উঠুক আগামী প্রজন্ম! তাই সে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে মজিদিয়া পাঠাগার, "জ্ঞানের আলোয়া আলোকিত হোক চারপাশ" এই স্লোগানকে ধারণ করে।

পাঠাগারে মানুষ জন আসে পড়াশোনা করে, বই ধার নে, ফেরত দে এইভাবে ভালোই চলছে, এর মধ্যে পাঠাগারটি মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠে এলাকায়। সমাজের যারা মাথা তাদের আয় রোজগার কমে গেছে কারণ আগে তারা সমাজে বিচারের নামে প্রহসন করতো, টাকা খেয়ে বিপক্ষে রায় দিতো।

বই পড়ে গ্রামের ছেলেদের চোখ কান খুলে গেছে, তারা এখন বিভিন্ন ফতোয়ার সহি শুদ্ধতা ওরা বলে দিতে পারে এতে কিছু লেবাসধারী লোকের এতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। তারা পরিকল্পনা করে পাঠাগারটাকে কৈশলে বন্ধ করে দেয়ার।

কিছুদিন পর গ্রামের অসাধু লোক এবং মসজিদের ইমামকে নিয়ে প্রচার চালায় পাঠাগারে অশ্লীল বই পড়ানো হয়, আমাদের ধর্ম নিয়ে উল্টা পাল্টা বইও ঐখানে আছে ইত্যাদি। এতে সাধারণ লোকজন কিছুটা ক্ষেপে গেলোও তারা তেমন কিছুই করতে পারেনা। এরপর ওরা সিদ্ধান্ত নে রাতের আঁধারেই নিভেই দিতে হবে গ্রামের আলো, যে কথা সেই কাজ।
এতে একটি স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেলেও মানুষ জন বুঝতে পারে কারা এটি করছে। ইফতেখার ও দমে যাওয়ার পাত্র নয়, সে সিদ্ধান্ত নে প্রত্যেক ঘরে ঘরে পাঠাগার গড়ে তুলতে পারলে আর কেউ তা পুড়িয়ে দিতে পারবেনা।

Source Pixabay
img_0.3577176764753225.jpg



0
0
0.000
0 comments