পেনশন

avatar

রঙ চায়ের সাথে চাল ভাজা দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে মক্তবে যায় মাইনুল। তিন ভাই বোন আর এক মায় নিয়ে ওদের চার জনের সংসার চলে বাপের পেনশনের টাকা দিয়ে। পেনশনের টাকা দিয়ে নিশ্চয়ই এর চেয়ে ভালো নাস্তা করা সম্ভব নয় তাই মাইনুল বুঝে, তাই ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলে মাইনুল এর সকাল বেলায় রোজ শক্ত চাল ভাজা চিবোতে ভালো না লাগলেও কিছুই করার নেই।

কারন তার বাপ নেই, মাথার উপর বড় দুই বোন আছে
বয়সে সে সবার ছোট হলেও দায়িত্বে সে এখন সবার বড়। মাইনুলের বাপ মারা গেছে বছর দুই হলো। মাইনুলের দুই বোনেরও কারো পড়ালেখা শেষ হয়নি। মাইনুল ক্লাস ফাইভে পড়ে। বড় দুই বোন যথাক্রমে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে, তারপরের জন এসএসসি পরীক্ষা দিবে।

মক্তব থেকে এসে বাড়ির পাশে নিজেদের জমিতে কাজ করে কিছু শাক সবজি চাষাবাদ করে যাতে করে নিজেদের খাওয়া চলে। যাতে করে বাড়তি টাকা খরচ না হয় সংসারের সে দিকে খেয়াল থাকে সবসময় মাইনুল এর।

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয় বারোটা থেকে তাই বাড়তি সময়টা দিয়ে যদি সংসারের হাল ধরা যায় এই চিন্তায় থাকে মাইনুল এর। বড় বোন ও পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করায়, তা দিয়ে নিজের খরচ নিজেই চালায় বাড়তি টুকু দিয়ে ছোট বোনের পড়ালেখা খরচে সাহায্য করে।

মাইনুল এর বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকদের ও আলাদা একটা সাপোর্ট পায় ওরা। এতে করে মাইনুলদের সংসার যৎসামান্য পেনশনের টাকা দিয়ে কোন রকম চলে যায়। আর যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখা বাপের পেনশনের এক কালিন কিছু টাকা। টাকা অঙ্কটা তেমন বড় নয় কারন তার বাপের চাকরির বয়স বেশিদিন হয়নি। তবুও যে কয় টাকা পেয়েছে তাও নেহাত কম নয়।

মাইনুলদের ঐ অল্প টাকায় ও শকুনের চোখ পড়ছে, তার জেঠাতো ভাই কে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে টাকা লাগতেছে তাই তার জেঠা এসে মাইনুল এর মায়ের কাছে কান্না কাটি করতেছে টাকা ধার চেয়ে। কিছুতেই মাইনুলের মা দিবেনা, পরে তার জেঠি এসে মায়া কান্না করে বিভিন্ন ভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করে টাকা ধার নে ছয় মাসের কথা বলে, এবং বলে বড় মেয়ের বিয়ের সময় গয়নাও দিবে।

দিন যায় মাস যায় মাইনুলের বড় বোনের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে, কিন্তু মাইনুল বলে আগে আপার এজটা চাকরি হোক তারপর বিয়ে। সবাই এতে সায় দে। এদিকে প্রাইমারি স্কুলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করে মাইনুল এর বড় বোন।

আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে বইয়ের ভাঁজে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের রেজাল্ট শিট নিয়ে বাড়ি ফিরে মাইনুল, বড় বোনের রেজাল্ট বলে কথা! নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সবাই মিলে রেজাল্ট দেখে। রেজাল্ট পজিটিভ। রেজাল্ট দেখে মাইনুল এর মা কেঁদে ফেলেন।

এদিকে মাইনুল এর বড় বোনের বিয়েও ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু তার জেঠা ওদের টাকা ফেরত দেয়ার কেন নাম গন্ধ ও নেই, গয়না তো ধূসর স্মৃতি যেনো!
মাইনুলের মা ভিশন চিন্তায় পড়ে গেলেন, টাকা ছাড়া মেয়েকে বিয়ে দিবেন কী করে? মাইনুল বলে মা চিন্তা করোনা, আমি হেড স্যারের সাথে আলাপ করে রাখছি উনি টাকার ব্যবস্থা করে দিবেন।

Source Pixabay
img_0.480856810549766.jpg



0
0
0.000
5 comments
avatar

একটা সংগ্রামমুখর পরিবারের গল্প। এরকম অনেক পরিবারেরই অস্তিত্ব পাওয়া যায় আমাদের আশে পাশে কিন্তু আমরা খুব অল্পই তাদের খোজ খবর নেই, তাদের পাশে দাড়ায়। যেটা আসলে আমাদের এক প্রকার দায়িত্বের অবহেলা।

ভাল লিখেছেন। গল্প তো মনে হচ্ছে শেষ হয় নাই। আরো পর্ব হবে নাকি?


এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও৷ ভালো সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করো না৷ আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে গ্রাস করো না ৷ এটা মহাপাপ৷ (সুরা নিসাঃ আয়াত ২)

0
0
0.000
avatar

আরেকটা পর্ব করার ইচ্ছে আছে। সত্যিই আমাদের আসপাশের চিত্রই। ধন্যবাদ ভাই।

0
0
0.000
avatar

আমাদের সব পরিবারেই এমন চিত্র দেখাই যায় । আর আপনি চিত্র গুলো অনেক সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপনার লেখার মধ্যে। অপেক্ষা করছি তার পরের পর্বের জন্য।

0
0
0.000
avatar

আমি কিংবা আমরা সবাই কম বেশি এই রকম চিত্র দেখে বড় হই, ধন্যবাদ।

0
0
0.000